ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি

থানার গেটের বাম দিকে রাস্তায় ভ্যানের ওপর লাশের স্তূপ দেখতে পাই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৮ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল/ফাইল ছবি

গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১২তম সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শেষ হয়েছে। জবানবন্দিতে পুলিশ কনস্টেবল মো. রাশেদুল ইসলাম (৪৬) জানান, ঘটনার দিন আশুলিয়া থানার মেইন গেটের (প্রধান ফটক) বাম দিকের রাস্তার ওপর একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ দেখতে পান তিনি। এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) দিন ঠিক করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে জবানবন্দি দেন পুলিশ কনস্টেবল মো. রাশেদুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

জবানবন্দিতে পুলিশ কনস্টেবল মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় ড্রাইভার (কনস্টেবল) হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ওই দিন আমার কোনো ডিউটি ছিলো না। থানা ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থান করছিলাম। আনুমানিক বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে থানা ভবনের জানালা দিয়ে দেখি, নিচে লোকজনের হৈচৈ এবং গুলির শব্দ। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সেখানে থাকা নিরাপদ না মনে করে নিচে নেমে আসি। থানার মেইন গেটের (প্রধান ফটক) বাম দিকে রাস্তার ওপর একটি ভ্যানের ওপর মরদেহের স্তূপ দেখতে পাই।

রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি সায়েদ স্যার বলেন, ‘রাশেদ আপনার হাত খালি আছে, মরদেহগুলো ঢেকে দেন।’ পরে পাশে থাকা নীল রংয়ের ব্যানার দিয়ে মরদেহগুলো ঢেকে দেই। ওই সময় ওসি সায়েদ স্যারের সাথে ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস, এএসআই বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল মুকুল চোকদার ও ডিবির ইন্সপেক্টর আরাফাত।

ওই ঘটনার পর থানার পশ্চিম পাশে আটতলা একটি ভবনের নিচে আনুমানিক এক ঘণ্টা অবস্থান করেছিলেন জানেয়ে জবানবন্দিতে রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, ওই ভবনের নিচতলার একটি ছেলেকে আমি অনুরোধ করি আমাকে একটি পাঞ্জাবি ও টুপি দাও। আমি ওই পাঞ্জাবি ও টুপি পরে কাইচা বাড়ি রোড হয়ে এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করি। পরে শুনতে পাই আশুলিয়া থানার ভ্যানভর্তি লাশগুলো পুলিশের গাড়িতে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
যারা এই কাজ করেছে তারা অমানবিক কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন পুলিশ কনস্টেবল মো. রাশেদুল। জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা করা হয়। এর আগে, গত ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। এ মামলায় দোষ স্বীকার করেছেন এসআই শেখ আবজালুল হক।

একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করে ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া রাজসাক্ষী হতে চাওয়া নিয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হন এসআই শেখ আবজালুল।

এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ পলাতক আট আসামিকে গ্রেফতারসহ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।

গত ২ জুলাই এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয়জন। এরপর পুলিশ ভ্যানে মরদেহগুলো তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। পেট্রোল ঢেলে তাকেও জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা মারা হয়। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

এফএইচ/এমএমকে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।