করোনা : মানবদেহে জীবাণুনাশক প্রয়োগ বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ২০ মে ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত স্যানিটাইজিং জীবাণুনাশক ব্যবহার ও প্রয়োগ বন্ধে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

জনস্বার্থে বুধবার (২০ মে) ই-মেইল এবং ডাকযোগে (ডিমান্ড অব জাস্টিস) নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। পরে নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন তিনি।

নোটিশে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), আইইডিসিআ ‘র পরিচালক, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এবং পি আই ডির প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানবদেহে জীবাণুনাশক প্রয়োগ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

ফ্লোর, টয়লেট, মেটাল দ্রব্যাদি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আসবাবপত্র ইত্যাদি ছাড়া মানুষের পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং সীমিতভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মানবদেহে জীবাণুনাশক প্রয়োগে করোনাভাইরাস ধ্বংসের কোনো প্রমাণ নেই। স্যানিটাইজিং ট্যানেলে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা থেকে চোখ, চামড়া এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতির কথা বলেছে। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি নোটিশ পাঠানো হয় বলে জানান আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে করোনার জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। দেশে সম্প্রতি বক্স, চেম্বার, ট্যানেল, গেট ও বুথের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের দেহে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে করোনার জীবাণু দূর করার পদ্ধতি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিতে দেখা যাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, এর আগে গত ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে দেশের সব সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে জীবাণুনাশক ট্যানেল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পুনরায় গত (১১ মে) সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ওই বিধিমালার ১ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয়সংখ্যক জীবাণুমুক্তকরণ ট্যানেল স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। এক মাসের ভেতর সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য তুলে ধরে নোটিশে বলা হয়, ডব্লিউএইচও মানবদেহে ব্লিচিং পাউডার থেকে শুরু করে যেকোনো ধরনের জীবাণুনাশকের ব্যবহার নিষেধ করেছে। তারা বলেছে, এই রূপ জীবাণুনাশকের প্রয়োগ চোখ ও চামড়ার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জীবাণুনাশকের ব্যবহার শুধুমাত্র শক্ত আবরণের জিনিসের উপরিভাগে প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে। অর্থাৎ, ফ্লোর, টয়লেট, মেটাল দ্রব্যাদি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আসবাবপত্র, ইত্যাদি। মানুষের পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং সীমিতভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) স্পষ্ট করে তাদের গাইডলাইনে জানিয়েছে, তারা স্যানিটাইজিং ট্যানেলের ব্যবহার সমর্থন করে না। এছাড়া তারা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এরূপ জীবাণুনাশক প্রয়োগে করোনাভাইরাস ধ্বংসের কোনো প্রমাণ নেই। স্যানিটাইজিং ট্যানেলে যে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা থেকে চোখ, চামড়া ও শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতির কথা বলেছে ।

ভারতের স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ১৯ এপ্রিল মানবদেহে জীবাণুনাশক ব্যবহার কোনো প্রকারেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই ধরনের রাসায়নিক উপকরণের তৈরি জীবাণুনাশক শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ক্ষতিকারক বলে নির্দেশনা জারি করেছে।

মালয়েশিয়া সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণাতেও মানবদেহে এই রূপ জীবাণুনাশক প্রয়োগ বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন এবং ঝুকিপূর্ণ জানিয়ে যেকোনো ডিভাইজের মাধ্যমে মানবদেহে জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং প্রয়োগ বাতিল করেছে।

আইনজীবী বলেন, স্বাস্থ্যের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসি থেকে শুরু করে পৃথিবীর কোথাও মানুষের শরীরে সরাসরি জীবাণুনাশক ব্যবহারের বিষয়টিকে ঝুকিপূর্ণ মনে করে বাতিল করছে, সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সব অফিসে জীবাণুনাশক ট্যানেল ব্যবহারের নির্দেশনা জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে। এতে নাগরিকের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বনে একদিকে সরকারের প্রচুর অর্থের ব্যয় হবে এবং অন্যদিকে নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ঝুঁকিতে পড়বে।

তাই জনস্বার্থে মানবদেহে ব্যবহার কিংবা প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত যেকোনো ধরনের ডিভাইজ যেমন বক্স, চেম্বার, ট্যানেল, গেট, বুথ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এফএইচ/এমএসএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।