পুরো ঢাকা লকডাউন চেয়ে করা রিটে আদেশ দেননি হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ১৫ জুন ২০২০
ফাইল ছবি

 

সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশে জোনভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় সমগ্র ঢাকা সিটি লকডাউন চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশ দেননি হাইকোর্ট।

তবে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলছেন, ‘যদি লকডাউন ঘোষণা অনুযায়ী কার্যকরী না করা হয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।’ এই আইনজীবী নিজেই সেটি জাগো নিজকে নিশ্চিত করেন।

সোমবার (১৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।

মনজিল মোরসেদ জানান, সমগ্র ঢাকা সিটি লকডাউন নিয়ে রিটের ওপর গতকাল শুনানি শেষে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। কোর্ট আদেশে বলেছেন- ‘সরকার ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়া সঙ্গত হবে না মর্মে আদালত মনে করেন।’

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাজধানী ঢাকা মহানগরের পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণার দাবিতে রিট আবেদনটি করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবির) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি আইনজীবী মো. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন।

রিট আবেদনে ঢাকা শহরকে লকডাউন ঘোষণা এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের দাবি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব (হাসপাতাল ও প্রশাসন), অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।

রিটে বলা হয়েছে, পুরো ঢাকা শহর লকডাউনের পর উক্ত সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়ররা কমিশনারদের মাধ্যমে প্রতি এলাকায় প্রয়োজনে গরিবদের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করবেন। এ কাজে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য করোনাকালে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা শহরে হাজার হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে এক হাজার ২০৯ মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ১৮ এপ্রিল সরকার প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহকে সভাপতি করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি গঠন করার পর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় উক্ত কমিটি সর্বশেষ গত ৮ জুন এক সভায় সর্বসম্মতভাবে করোনায় মৃত্যু কমানোর জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় এবং কার্যকরী সুপারিশ প্রদান করে। রিট আবেদনে পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রম অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। তবে ছুটি না বাড়ানোর ফলে শেষ হয় সরকার ঘোষিত টানা ৬৬ দিনের ছুটি। এটিই ছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা ছুটি।

তবে যে কারণে দীর্ঘ এ ছুটি সরকার ঘোষণা করেছিল দৃশ্যত তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কারণ, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কোনো উন্নতি এখনও দেশে দৃশ্যমান নয়। প্রতিদিনই বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্তর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।

সে অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বিশেষজ্ঞরাও। সরকারি হিসাবে, দেশে এ পর্যন্ত ৯০ হাজার ৬১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছেন এক হাজার ২০৯ জন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আজ এ আদেশ দেন।

রোববার (১৪ জুন) আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট অমিত তালুকদার।

এফএইচ/এফআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।