রানার জামিন স্থগিত করে হাইকোর্টের রুল

সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১ শতাধিক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ভবনটির মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় বিচারিক আদালতে দেয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে, ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। এর ফলে কারাগার থেকে সোহেল রানার মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। সোহেল রানার পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী মো. আলমগীর হোসেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, করোনাকালীন সময়ে ১৭ মে তাকে বিশেষ জজ আদালত জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ৮ জুন নিয়মিত আদালত খোলা পর্যন্ত স্থগিত করেন। এ আদেশ অনুসারে আজ আদালত জামিন বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেছেন। একইসঙ্গে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন স্থগিত করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমিন উদ্দিন মানিক জানান, সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাভার মডেল থানার মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মুহা. মাহবুবুল আলম।
এ মামলায় দুই কোটি ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান আমিন উদ্দিন।
২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সম্পদের হিসাব চেয়ে কারাগারে নোটিশ পাঠায় দুদক। তখন কারাগার থেকে সম্পদের কোনো হিসাব দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন সোহেল রানা। এরপরই আয়কর বিভাগ থেকে তার সম্পদ ও আয়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সম্পদের হিসাবে অসঙ্গতি পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মুহম্মদ মাহবুবুল আলম সাভার মডেল থানায় মামলা করা হয় রানার বিরুদ্ধে।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ভবনের মালিক রানা, তার পরিবার, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়রসহ বিভিন্ন জনের নামে ৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) একটি, দুদক ৩টি মামলা দায়ের করে।
২০১৪ সালের ১৫ জুন সাভারে ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে সোহেল রানাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা করা হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে সোহেল রানাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এ শিল্প-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৪ পোশাক শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। ওই ভবনের মালিক ছিলেন- স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। এ ঘটনায় ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা দায়ের করেন তৎকালীন সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ।
পরে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এফএইচ/এইচএ/এফআর/জেআইএম/এমএস