শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে হাইকোর্টের রায়, নির্দেশনা যাচ্ছে সব আদালতে

শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনামূলক রায় ও আদেশের কপি সারাদেশের পারিবারিক আদালতগুলোতে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৩ মে) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে দেশের সব জেলা ও দায়রা জজদের প্রতি এমন নির্দেশনা জারি করা হয়।
এর আগে সন্তানের হেফাজত নিয়ে এক মায়ের করা রিট খারিজ করে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগে কর্মরত) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন। একই বছরের ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
রায়ে দেশের সব পারিবারিক আদালতে শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে থাকা মামলাগুলো ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে রায়ে আদালত বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ, মনোমালিন্য, দাম্পত্য কলহসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের হেফাজত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হেবিয়াস করপাস মামলা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। আদালত এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, পারিবারিক আদালতসমূহে শিশুদের অভিভাবক ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান।
আদালতের নজরে এসেছে, ২০১০ সালে থেকে ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের দাখিলকৃত মামলাসমূহ এখনো বিচারাধীন। শিশুদের অভিভাবক ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো এত দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকা হতাশাজনক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৯ অনুযায়ী, দেশের সব পারিবারিক আদালতে শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো যাতে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
পারিবারিক আদালত অবমাননার সাজা কঠোর করতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ:
ওই একই রায়ে পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির বিধান সংশোধন করে আরও কঠোর করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এক্ষেত্রে সিভিল জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা বলেও উল্লেখ করেছেন আদালত।
রায়ে আদালত বলেছেন, পারিবারিক আদালতসমূহের বিভিন্ন আদেশ, বিশেষত শিশু সন্তানকে দেখা-সাক্ষাতের আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষ পালন করছে না। ফলশ্রুতিতে তারা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস অধিক্ষেত্রে এসে আশ্রয় গ্রহণ করছেন।
পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ধারা ১৯ অনুযায়ী, পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে সিভিল জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। আদালত প্রত্যাশা করে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মামলা থেকে জানা যায়, রংপুরের মেয়ের সঙ্গে ২০১১ সালে বিয়ে হয় রাজশাহীর এক ছেলের। ২০১৫ সালে তাদের কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। এ অবস্থায় শিশুটিকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন শিশুটির মা। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
এর আগে শিশুটির মা পারিবারিক আদালতেও একটি মামলা করেন। হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুটিকে আদালতে হাজির করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মায়ের সঙ্গে শিশুটি সময় কাটায়। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত ৭ নভেম্বর হাইকোর্ট সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে মামলাগুলো ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। পারিবারিক আদালতে শিশুটির মায়ের করা মামলাটি ৩১ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, শিশুটির বয়স এখন প্রায় ছয় বছর। বাবার সঙ্গে শিশুটি রাজশাহীতে থাকে। মা রাজশাহী গিয়ে শিশুটিকে দেখতে ও সময় কাটাতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
এফএইচ/এমএইচআর