ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

একজনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

আলমগীর হান্নান | খুলনা | প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ১৪ জুন ২০২২

একজন দু’জন না, রয়েছে ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। কিন্তু একজনও নেই। ঘোষণা দিয়ে চার বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এক্স-রে মেশিন, অপারেটরের অভাবে অনেক আগেই বিকল হয়ে গেছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। আছে সবেধন নীলমণি হিসেবে একটি মাত্র ইসিজি মেশিন। নেই সুপেয় পানির কোনো সংস্থান। কিনে আনা পানি ছাড়া কোনো গতি নেই রোগী ও তাদের স্বজনদের। এভাবেই চলছে এক লাখ ৭২ হাজার বাসিন্দা অধ্যুষিত রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

খুলনা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রূপসা উপজেলার কাজদিয়া এলাকায় অবস্থিত ৫০ শয্যার রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যা হলেও এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরে চিকিৎসা নেন চার শতাধিক রোগী। সরকার প্রদত্ত ওষুধের কোনো ঘাটতি না থাকলেও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে রয়েছে নানা কথা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের জন্য জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, জুনিয়র কনসালটেন্ট ফিজিক্যাল মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক্স, জনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি অ্যান্ড অবস., জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেস্থেসিয়ালজির পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন থাকলেও তাকে সব সময় কাজ করতে হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা জেনারেল হাসপাতালে। কোনো বিশেষজ্ঞ ছাড়াই জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করে চলছে হাসপাতালটি।

হাসপাতালের স্টোরকিপার জানান, হাসপাতালের জন্য অনেক আগে একটা এক্স-রে মেশিন দেওয়া হয়েছিলো। সেটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক পত্র দেওয়া হয় মেরামত করার জন্য। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে ঢাকা থেকে একটি টিম এসে মেশিনটি ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে যান। সেই মেশিনটি আজও হাসপাতালের এক্স-রে রূমে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীদের দৌড়াতে হয় খুলনার যেকোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে।

একজনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে শুধু পড়ে থেকে থেকে। মেশিন দেওয়ার পর দেওয়া হয়নি কোনো অপারেটর। ফলে ব্যবহার না হতে হতে মেশিনটি এখন নিজেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।

তিনি জানান, হাসপাতালের যে প্যাথলজি সেন্টার রয়েছে তা দিয়ে মোটামুটি কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু পানীয় পানির কোনো ব্যবস্থা এখানে কার্যকর নেই। একটা সাবমার্সিবল বসানো আছে। তা দিয়ে যে পানি ওঠে তা প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত। ফলে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো কাজ হয় না সেই পানি দিয়ে।

সরেজমিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। বাইরে রয়েছে প্রচুর ময়লা আবর্জনা।

হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে গত দুই দিন ধরে ভর্তি থাকা রোগী আব্দুল গফ্ফার মোল্লা বলেন, এখানে চিকিৎসকরা নিয়মিত আসছেন। চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি নেই। তবে কয়েকটি টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে থেকে টেস্ট করে নিয়ে আসতে হচ্ছে।

একজনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

তিনি বলেন, হাসপাতালে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি আনতে হয়। কিন্তু তাও সব সময় সম্ভব হয় না। যখন ওই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকে তখন কিনে খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

হাসপাতালের বিষয়ে নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, একটা হাসপাতালের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খুবই প্রয়োজন। কিন্তু এখানে একজনও নেই। চাহিদাপত্র দিয়েও কোনো কাজ হয় না।

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ একজন ছিলেন, তাকেও খুলনা জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে মাঝে মধ্যে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। তবে হাসপাতালে জুনিয়র অনেক চিকিৎসক রয়েছেন। রয়েছেন ৩৪ জন সেবিকা।

একজনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

হাসপাতালেরর গুরুত্বপূর্ণ দুটি মেশিন (এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম) সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতি মাসেই এই বিষয়ে পত্র দেওয়া হয়। ওই পত্র দেওয়াই সার। কোনো কাজ হয় না।

খাবার পানির বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েকবার নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পানিতে এতো বেশি আয়রন যে তা ব্যবহারও করা যায় না।

এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, এই হাসপাতালটি খুলনা শহরের খুব কাছে। কিন্তু উপজেলার বাসিন্দাদের জন্য এটি খুব উপকারী। হাসপাতালের জন্য এক্স-রে মেশিন আর আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন খুবই জরুরি। আগামী মাসে যে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে সেখানে এই বিষয় উত্থাপন করা হবে।

এফএ/জেআইএম