সৌম্য সালেকের তিনটি কবিতা

কালো মায়ের গল্প
বাবা বকাঝকা করছেন, আমরা ভয়ে জড়সড় দুইভাই
দাঁড়িয়ে আছি মার পাশে
ভুল শুধরে দিবো কিংবা প্রতিবাদে আঙুল উড়াবো
তেমন বয়স আমাদের ছিলো না
তাই নির্বিকার আমরা এরকম বহুবার
মায়ের কালো গাল বেয়ে অশ্রু গড়াতে দেখেছি
রোজ তিন বেলা আমরা রাঁধতে দেখেছি মাকে
কিন্তু হালিমের মার মতো সাজতে দেখিনি কখনো
অলঙ্কার কিংবা অনাদৃত পালকের এসব আচ্ছাদন
স্পর্শ করেনি জননীর কৃষ্ণমুখ
বাবা বাইরে বেরুতেন আর তিনি চুপচাপ পিছু নিয়ে
কাচারি ঘর পর্যন্ত এগিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন
তারপর সারাদিন অস্থিরতা, অপেক্ষার শ্বাস
মা কালো কীভাবে বাবার মন ভলো থাকবে
তাই আমরা কৈশোরেই প্রৌঢ় হয়ে উঠি
আরও শান্ত হতে শিখি
আর আমাদের মা ছিলেন মাটি…
****
বীক্ষণ
অবিরাম ধান কেটেছি গত ঘুমে, কাস্তে ছিল ঘামের জোয়ার
অবিরাম মাছ ধরেছি গত ঘুমে, জাল ছিল নিশ্ছিদ্র তৃষার
অবিরাম পুড়েছে জীবন গত ঘুমে, অসহ রাতের শরম
অবিরাম বীজ বুনেছি গত ঘুমে, মাটি ছিল নারীর নরম
অবিরাম হেঁটেছি শ্রমণ গত ঘুমে, মন ছিল মত্ত শ্রবণে
অবিরাম গেয়েছি গান গত ঘুমে, বেহুলার অশ্রু শ্রাবণে
আরও অবিরাম, অবিরাম কেটেছে প্রহর কত অনুভবে জেনে যাই আমি
তবু গানে ও গমনে বুঝি না জীবনে চাষ করি কার জমি...
****
ভাটির ভাসান
এক ঘুমসারি মেঘের অবকাশে ঘনবন ছিল স্বপ্নের আর নিচে চির-বালকের মৃদুরথে অপলক নেমে গেছে পল্লীসোহাগ ধনু...
মুখোমুখি খেলে যায় সন্ধ্যার আবাহনী আর শ্রান্ত পালের ছায়া পালিয়ে যাবার পথে কোনো বাধা নেই তবু আনত রাখাল মধুটিলা পার হবে বুনোফুল গোলাপী মাটির স্নেহে সে কেবল পাখিদের ভালোবাসা চায়
সেই হারাবার পথে পথে উপ্ত শ্যামল ছিল সারাদিন ভেসেছে বাউল; মিটমিট মাধবী হাওয়ার তটে আরও ছিল হিম দুটি নদী কংস সোমেশ্বরী...
কবি পরিচিতি: কবি সৌম্য সালেকের আসল নাম আবু ছালেহ মো. আবদুল্লাহ। তার জন্ম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ সালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার কাদলা গ্রামে মামার বাড়িতে। বাবা মো. নূরুল ইসলাম, মা রৌশন আরা বেগম। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।
প্রকাশিত গ্রন্থ: আত্মখুনের স্কেচ, ঊষা ও গামিনি, পাতাঝরার অর্কেস্ট্রা, শব্দ চিত্র মত ও মতবাদ। সম্পাদিত গ্রন্থ: যাপনে উদযাপনে ইলিশ, প্রত্ননাটক মহাস্থান, শত গানে বঙ্গবন্ধু, চিত্রশিল্পে ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক জীবনচিত্র, অদ্বৈত মল্লবর্মণ গল্পসংগ্রহ। সম্পাদিত ছোটকাগজ: চাষারু, উছল, শালবন এবং জলপুষ্প।
শিল্প-সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন দেশজ জাতীয় পাণ্ডুলিপি পুরস্কার, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক পাণ্ডুলিপি পুরস্কার এবং গ্রামীণফোন ৬ষ্ঠ ইলিশ উৎসব সম্মাননা। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সৌম্য সালেক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দপ্তরে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
এসইউ/এএসএম