করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ ২৫ দেশে অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র
নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত বা ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডির সংক্রামক রোগবিষয়ক জরুরি রিজার্ভ তহবিল থেকে এ অর্থায়ন করা হবে বলে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অন্যান্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং ইউএসএআইডির কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী অংশীদারদের পরিচালিত প্রকল্পের জন্য এ তহবিল দিচ্ছে। এটি গত ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিশ্রুত ১০ কোটি ডলারের প্রথম কিস্তি। বিশ্বের যে কোনও জায়গার সংক্রামক রোগের হুমকি সর্বত্রই হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আমরা অন্য দাতাদেরও কোভিড-১৯ মোকাবেলার লড়াইয়ে সহায়তার আহ্বান জানাই।’
‘গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি এজেন্ডার (জিএইচএসএ) আওতায় সংক্রামক রোগের জন্য প্রস্তুত হতে ও তার মোকাবেলায় সহায়তা করতে ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্যান্য সংস্থা ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এ তহবিল নিচের উচ্চ-অগ্রাধিকারমূলক দেশগুলোতে কোভিড-১৯ এর হুমকি মোকাবেলায় সহায়তা করবে।’
দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাজিকিস্তান, ফিলিপাইন, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
নতুন ঘোষিত সহায়তা
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোট তহবিলের মধ্যে ডব্লিউএইচও এর কাছে যে অর্থ যাচ্ছে তা বর্তমানে আক্রান্ত বা ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারকে তাদের গবেষণাগারগুলোকে বিপুলসংখ্যায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা, প্রবেশ পয়েন্টগুলোর জন্য একটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, সক্রিয়ভাবে আক্রান্তের ঘটনা চিহ্নিত করা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতার জন্য নির্দিষ্ট ঘটনাভিত্তিক নজরদারি চালু করা, দ্রুত সাড়া প্রদানকারী টিমকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং উপকরণে সজ্জিত করা, আক্রান্তের ঘটনা তদন্ত করা, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকে চিহ্নিত করা এবং কোভিড-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করার কাজে ব্যয় হবে।
অন্যান্য নানা ধরনের অংশীদারের মাধ্যমে যে তহবিল ব্যয় হবে তা ছয়টি বিস্তৃত পরিসরের কাজে সহায়তা করবে। যেমন- পরীক্ষাগার শক্তিশালী করা; সংক্রামক রোগ চিহ্নিত করতে নজরদারি ও এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া, এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ ও ঝুঁকির বিষয়ে তাদের অবহিত করা, প্রবেশের স্থানে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক স্ক্রিনিং, স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক স্থাপনাগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের ঘটনার ব্যবস্থাপনা করা।
এ ছাড়া চীনের উহানে উদ্ভূত কোভিড -১৯-এর প্রাদুর্ভাবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউএসএআইডি জরুরি আন্তর্জাতিক মজুত থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) অনুদানের জন্য আক্রান্ত দেশগুলোর সরকারের অনুরোধ পর্যালোচনা করে সে ব্যাপারে সাড়া দিয়েছে। ডব্লিউএইচও এবং ‘হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্স’ এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের ভিত্তিতে এই পিপিই বিতরণ করা হচ্ছে (গগলস, গাউন, মুখের মাস্ক এবং গ্লাভস), যা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আগের দাতব্য অনুদানের পরিপূরক।
চলমান সহায়তা
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরেই জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সহায়তার ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ। ইউএসএআইডি এবং পররাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে আমেরিকান করদাতারা উদারতার সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য ৯ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ সরবরাহ করেছে। এই অর্থ অনেক জীবন বাঁচিয়েছে, রোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে রক্ষা করেছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও দেশকে স্থিতিশীলতা যুগিয়েছে।
অর্থের ওই অঙ্কের মধ্যে ইউএসএআইডি ২০০৯ সাল থেকে কোভিড-১৯-এর মতো রোগসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উদীয়মান স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং মোকাবেলায় ১শ’ ১০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গত ১৫ বছরে ইউএসএআইডি’র বিনিয়োগ এবং পাশাপাশি জিএইচএসএর অধীনে ২০১৫ সাল থেকে দেয়া সহায়তা মারাত্মক রোগজীবাণুর বিষয়ে নজরদারির উন্নতি করা, পরীক্ষাগার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি-যোগাযোগকে আরও উন্নত করায় সহায়তা করেছে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে মারাত্মক অসুখ বিসুখ ছড়িয়ে পড়া মোকাবেলায় তহবিল যোগানো হয়েছে এবং জীবাণুর ক্রমশই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার হুমকি মোকাবেলার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
আক্রান্ত দেশগুলোতে রোগের বিস্তার হ্রাসে সহায়তা এবং সংক্রামক রোগজীবাণুগুলোর সংক্রমণ মোকাবেলার স্থানীয় এবং বৈশ্বিক প্রচেষ্টার উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে আমেরিকান জনগণকে রক্ষা করতে ইউএসএআইডি ‘গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি এজেন্ডার (জিএইচএসএ) আওতায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা তৈরি করে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সহায়তা করতে আগ্রহী ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীগুলো সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিজাস্টার ইনফরমেশন (CIDI.org ) এর কোভিড -১৯ রেসপন্স সংক্রান্ত ওয়েবপেজ দেখার পরামর্শ দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
জেডএ/এমএস