‘স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি’ থাকছেন না অনেকেই!
বিদেশফেরত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের অনেকেই ১৪ দিন ‘স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি’ থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও তথ্য গোপন করে তারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি চাকরির কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশসহ অন্যান্য দেশ সফর করে এসেছেন— এমন অনেকে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে অফিসে যোগদান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তাদের মধ্যে বাহ্যিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকায় তারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, কেউ কেউ অফিসও করছেন। কিন্তু এ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হওয়ার ঝুঁকি থাকায়, রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাদের কমপক্ষে ১৪ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যে কোনো দেশ থেকে বিভিন্ন পথে (আকাশপথ, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও রেলস্টেশন) থার্মাল স্ক্যানার এবং হ্যান্ড ইনফারেড থার্মোমিটারের মাধ্যমে জ্বর মাপার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ১৫ দিনে বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস, জ্বর, হাঁচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে কি-না, তিনি অন্য কোনো রোগে ভুগছেন কি-না ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এছাড়া হেলথ ডিক্লারেশন ফরমের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার প্রতিশ্রুতি নেয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) থেকে তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে শারীরিক অবস্থার ফলোআপ করা হচ্ছে।
প্রতিদিনই বিভিন্ন পথে গড়ে ১২ থেকে ১৬ হাজার দেশি-বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে আসছেন। গত ২১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পথে সোয়া পাঁচ লাখের বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুর হেলথ স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করে আইইডিসিআর। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন সুস্থ এবং তাদের যেকোনো সময়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আক্রান্ত দেশ থেকে আগত অনেকেই নিজেদের সুস্থ দাবি করে জানিয়েছেন, তিনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সে প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ দিনের লম্বা ছুটি দিতে চায় না। সুস্থ থাকলে তিনি যেন অফিসে যোগদান করেন সে ব্যাপারে তাগাদা দেন। ওই ব্যক্তি অফিসে না আসায় কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়ে দিচ্ছে। চাকরি বাঁচাতে তিনি কাজে যোগদান করবেন বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নাগরিক, যারা সম্প্রতি বিদেশ সফর করেছেন কিংবা বাইরে থেকে দেশে বেড়াতে এসেছেন, তাদের ১৪ দিন বাড়িতে একটি ঘরে অবস্থান করার কথা বলছি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তারা যেন বাইরে না যান, সে ব্যাপারে সতর্ক করছি।’
এক্ষেত্রে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং বিষয়গুলো তাদের নজরে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা অফিস-আদালতে চাকরি করেন, তাদের জন্য ১৪ দিন ছুটি পাওয়া মুশকিল। তাই তারা অফিস করতে চাইছেন। কিন্তু তারা অফিস করলে ওই অফিসের সহকর্মীদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়।’
ডা. ফ্লোরা সংশ্লিষ্ট অফিস কর্মকর্তাদের ওইসব ব্যক্তিকে বাড়িতে থেকে কাজ করিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান।
বিদেশি নাগরিক যারা হোটেলে অবস্থান করছেন, তাদের ব্যাপারে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘যারা স্বল্প সময়ের জন্য এসেছেন তারা যেন বাইরে কাজে বের হলে যথেষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে সভা ও সেমিনারে যান। তারা যেন মাস্ক ব্যবহার করেন এবং এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে কথাবার্তা বলেন।’
এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ