সরকারি হাসপাতালে সন্দেহভাজন রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হবে
জ্বর, ঠান্ডা, হাঁচি ও কাশি নিয়ে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে গেলেই মুখের লালা সংগ্রহ করে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
চীন, ইতালি, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ ঘটছে কিনা তা জানতে রাজধানীর কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে সন্দেহভাজন নিউমোনিয়া রোগীদের মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হবে।
জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১৩ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশের স্থল, সমুদ্র, তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন দিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ দেশি ও বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন।
আইইডিসিআর শাহজালালসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিভিন্ন স্থল, সমুদ্রবন্দর ও রেলস্টেশন দিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের নাম-ঠিকানার তালিকা সংগ্রহ করে তাদের প্রতি নজরদারি করছে। বিদেশফেরত যাত্রীদের মধ্যে কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে প্রয়োজনানুসারে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গতকাল ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১৮৭ জন বিদেশফেরত যাত্রীর মুখের লালার নমুনা আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন রোগীদের মধ্যে তিনজনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে প্রায় সাড়ে ৪লাখ বিদেশফেরত যাত্রীর মধ্যে খুব স্বল্পসংখ্যক যাত্রীর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক বিদেশফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে এ রোগের সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা জানতে জ্বর, ঠান্ডা, হাঁচি, কাশি এবং সন্দেহভাজন নিউমোনিয়া রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পরীক্ষা করা হয়নি।
স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে অবশ্যই দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে হলেও নমুনা পরীক্ষা করা এখন সময়ের দাবি উল্লেখ করে এসব বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইসিডিডিআরবি’র ১৮টি সাইটে বছরজুড়ে হাসপাতাল বেইজড ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভে করে থাকে। এসব সেন্টারে আগত রোগীদের কারো মধ্যে নিউমোনিয়া, জ্বর, কাশি, হাঁচি থাকলে তাদের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা উচিত। এ পরীক্ষার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে রোগটির সংক্রমণ ঘটেছে কিনা তা জানা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এতদিন শুধু বিদেশফেরত যাত্রীদের এ পরীক্ষা করা হলেও স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটেছে কিনা তা জানতে আপাতত রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হবে। দুই একদিনের মধ্যে এ পরীক্ষা শুরু হবে বলে তারা জানান।
এমইউ/ এমএফ/এমকেএইচ