হোম কোয়ারেন্টাইনে চট্টগ্রামের প্রবাসী বেশি, কম সিলেটের
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত দেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তাদের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তারা যেন দুই সপ্তাহ বাড়িতেই থাকেন তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারি করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের স্বার্থেই তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করছেন রোগতত্ত্ববিদরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন দুই হাজার ৪৭১ জন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের সিংহভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা। আর কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের সর্বনিম্নে সিলেট বিভাগ।
বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৪৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের এক হাজার ১৯৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৯৫ জন, খুলনা বিভাগে ৪৯ জন, বরিশাল বিভাগে ২৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৫ জন ও সিলেট বিভাগে মাত্র ৯ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা আজ আইইডিসিআর সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গত কয়েকদিনে কয়েকশ প্রবাসী বাংলাদেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ইতালি থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছেন। তাদের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কার্যকরী করার উপযুক্ত পন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাদের একটি বড় অংশ স্বেচ্ছা/গৃহ কোয়ারেন্টাইন পালন করছেন, যাদের গৃহ কোয়ারেন্টাইন পালন করতে অসুবিধা হচ্ছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন তাদের কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকালীন অসুবিধাসমূহ দেখভাল করবেন ও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবেন।
তিনি বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরত আসা কোনো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি স্বেচ্ছা/গৃহ কোয়ারেন্টাইন পালন করছেন না। কেউ কেউ এ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করছেন য়ে, তারা কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হবেন না। এটা ঠিক যে, তারা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশে গত ১৪ দিনের মধ্যে ছিলেন। এমনকি তারা সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোভিড-১৯ মুক্ত প্রমাণিত হলেও এরপর যেকোনো সময় সে দেশে থাকাকালীন বা বিমানে-ট্রানজিটে অবস্থানকালে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, হয়তো এখনও লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। দেশে ফেরার পর মোট ১৪ দিন পর্যন্ত তিনি অন্য সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকবেন, এ সুপ্তিকালে তার মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রকাশিত হতে পারে।
মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আক্রান্ত এলাকা থেকে আগত সবাইকে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে, সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ১৪ দিনের জন্য কষ্ট স্বীকার করে স্বেচ্ছা/গৃহ কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করি তারা সংক্রমণ প্রতিরোধে চালু থাকা দেশের আইন ভঙ্গ করবেন না। আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করার জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ