চীন থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে আনা হবে চিকিৎসা সামগ্রী
বাংলাদেশের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে ১০ হাজার কিটসহ চিকিৎসা সামগ্রী দিতে রাজি হয়েছে চীন। প্রয়োজনে চার্টার্ড ফ্লাইটে এসব সামগ্রী দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
শনিবার (২১ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন এ কথা বলেন। এসময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোমেন বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে যে, দেশে করোনা শনাক্তকরণ কিট নেই কিংবা সুরক্ষা সামগ্রী নেই। আমরা চীনকে অনুরোধ করেছিলাম। তারা ১০ হাজার টেস্টিং কিট ও ১০ হাজার সুরক্ষা সামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে। প্রয়োজনে সেসব চার্টার্ড ফ্লাইটে করে নিয়ে আসব। অনেক প্রাইভেট কোম্পানি এসব পণ্য আমদানির চেষ্টা করছে। প্রয়োজনবোধে সেগুলোও চার্টার্ড ফ্লাইটে নিয়ে আসব।
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইন ও স্থানীয় নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধের পাশাপাশি যেসব উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা আমাদের মিশনপ্রধানদের জানানো হয়েছে। তাদের মাধ্যমে আমরা প্রবাসীদের অনুরোধ করছি, কেউ দেশে ফিরতে চাইলে অন্তত কিছুদিন দেরি করুন।
ড. মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিসা শেষ হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। সব দেশই জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা ভিসার মেয়াদ বাড়াবে। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীরা যে যেখানে আছেন, তারা দেখছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সেসব দেশের সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সৌদি আরব মক্কায় নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তার মানে, বিষয়টি কত সিরিয়াস। আপনারাও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ছুটি বাতিল করে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কাজে সবাইকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে জনগণের সঙ্গে আমাদের যৌথ উদ্যোগ নেয়া দরকার। জনগণ সজাগ হলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব- বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখন দেশে মাত্র ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে কোভিড-১৯ সংক্রামণ রোধ করা সম্ভব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাস দেশে সংক্রমিত হচ্ছে বিদেশফেরতদের মাধ্যমে। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা বিদেশফেরতদের সান্নিধ্যে আসার পর এ বিপদে পড়েছেন। আমরা আগে কিছু ফ্লাইট রহিত করেছিলাম।
‘আমরা সকালে (শনিবার) ফাইনালি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে কোনো যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক উড়োজাহাজকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে নামার অনুমতি দেয়া হবে না। কিন্তু দেশ-কে তো লকডাউন করে দেয়া যায় না। তাই যুক্তরাজ্য, চীন, থাইল্যান্ড ও হংকংয়ের সঙ্গে বিমান চলাচল চালু রেখেছি। যাতে জরুরি প্রয়োজনে কেউ এসব দেশ হয়ে দেশে ফিরতে পারেন।’
ড. মোমেন বলেন, সরকারের স্থির সিদ্ধান্ত, প্রবাস থেকে যারাই ফিরবেন তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সেটা হোম কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক।
‘যদি কেউ অমান্য করেন তাহলে প্রবাসীদের হাতে থাকা অমোচনীয় দাগ দেখে প্রশাসনকে স্থানীয়রা জানাবেন। এরপর প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি বিদেশফেরতদের স্বজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বজন হলেও তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। কারণ ১৪ দিন পর্যন্ত এ ভাইরাস কারও শরীরে আছে কি-না তা বলা যায় না। কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চীনসহ অনেক দেশ সাকসেসফুল (সফল) হয়েছে।
জেপি/এইচএ/এমএআর/এমএস