করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন আয়ের মানুষ
করোনাভাইরাসের মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ জন্য সরকারকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। শনিবার (২১ মার্চ) ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ সুপারিশ করা হয়।
‘করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয়’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির পর্যালোচনা এবং সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিম্ন আয়ের মানুষ এই বৈশ্বিক মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারকে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য স্বল্পমূল্যে সরকারিভাবে পণ্য সরবারহ করতে খোলাবাজারে (ওএমএস) কার্যক্রম বাড়াতে হবে। যেসব অঞ্চলে নিম্নআয়ের মানুষ বেশি বসবাস করে যেখানে ওএমএস কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। যাতে করে তারা কম মূল্যে সহজে নিত্যপণ্য কিনতে পারে। আগামী দুই মাসের জন্য জরুরিভাবে এ কার্যক্রমা চালু করা দরকার। এছাড়া এসএসই প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের সহায়তা দেয়া দরকার। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা দেয়া জরুরি যাতে করে কর্মীদের বেতন বোনাস সঠিক সমেয় দিতে পারেন।
করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় লক্ষ্যনির্দিষ্ট এবং সম্প্রসারণধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে সংস্থাটি জানায়, কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মহামারি বিভিন্ন দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এখন এই ঝুঁকির সম্মুখীন। স্বাস্থ্যখাত, বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ব্যয় ও মুদ্রানীতি- এসকল খাত যেসব ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তার মোকাবিলায় সরকারকে লক্ষ্যনির্দিষ্ট সম্প্রসারণধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতি, অগ্রাধিকার পুনর্বিবেচনা সাপেক্ষে রাজস্ব ও সরকারি ব্যয় ও খাতভিত্তিক বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। করোনার ফলে যে সকল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। একইসঙ্গে চিকিৎসার জন্য বর্তমানে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, মেডিকেল যন্ত্রপাতি প্রয়োজনমাফিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার কারণে নগদ প্রণোদনার বাড়তি চাহিদা বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাস করে ঝুঁকি সামাল দেয়া পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।
মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ড. ফাহমিদা খাতুন জানান, স্বাস্থ্যসেবা খাতে অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ (জিডিপির ০.৯ শতাংশ) বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘকালীন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা (জিডিপির ১.১২ শতাংশ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের (জিডিপির ৫ শতাংশ) তুলনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেটের পরিমাণ অনেক কম।
ড. খাতুন বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫ শতাংশের মতো প্রতিষ্ঠানের জরুরি পরিবহন সেবা রয়েছে এবং প্রায় ২২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের অ্যালকোহলভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবস্থা রয়েছে। কোভিড-১৯-এর মতো জাতীয় সংকট মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এসকল প্রয়োজনীয় সেবার ক্ষেত্রে অর্থসংকুলান ও যন্ত্রপাতির ব্যাপক অপর্যাপ্ততা রয়েছে। তাই জরুরি বিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
বর্তমান প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এমনিতেই ২০১৯ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ঘাটতি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এর সঙ্গে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে অতিরিক্ত অর্থের যোগ করলে এই ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মহামারির ফলে তৈরি পোশাক খাত, চামড়াশিল্প, পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। এসব খাতের উদ্ভুত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন ড. খাতুন।
এসআই/বিএ