পোশাক কারখানা বন্ধ কবে, ঘোষণা ২৫ মার্চ
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়নি।
পোশাক কারখানা বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে ২৫ মার্চ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক।
তিনি জাগো নিউজকে জানান, আমরা খুব ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছি। ক্রেতারা সব ধরনের ক্রয় আদেশ স্থগিত করছে। বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হচ্ছে। এ খাত নিয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা কারখানা খোলা রাখবো নাকি বন্ধ রাখব এ বিষয়ে ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেবেন।
এদিকে সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে এক জরুরি ব্রিফিংয়ে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এ সময় পোশাক খাত বন্ধ থাকবে কি-না জানতে চাইলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে মাস্কসহ বিভিন্ন পণ্য পোশাক কারখানাগুলো তৈরি করে বিভিন্ন সংস্থার কাছে সরবরাহ করছে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে ২২ মার্চ বিজিএমইএর সভাপতি জানান, ভয়াবহ অবস্থা চলছে আমাদের। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতারা সব ধরনের ক্রয় আদেশ স্থগিত করছে। তবে আমাদের জন্য এটি স্থগিত নয় বাতিল। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২২ মার্চ পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ৮৯টি কারখানার ক্রয় আদেশ স্থগিত করেছে। ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ৩৬ হাজার ৬২২টি পোশাক কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ১ দশমকি ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।
বিশ্বে তৈরি পোশাকের সরবরাহকারী হিসেবে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ খ্যাতনামা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।
প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পোশাক কারখানায় রয়েছে। যেখানে কাজ করেন অন্তত ৫০ লাখ শ্রমিক, যাদের বেশিরভাগই নারী। তাদের অনেকের আয়ের ওপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ পরিবারের খাবার জোগানো কষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত দুইদিন ধরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের বৈঠকে অংশ নেয়া শ্রমিক নেতারা কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কারখানার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডা লকডাউন হয়ে আছে। ফলে প্রত্যেক দেশের ক্রয় আদেশগুলো স্থগিত করে বার্তা পাঠাচ্ছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে করে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে পোশাক খাত। এভাবে চলতে থাকলে কারখারা বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার জরুরি বৈঠক করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। বৈঠক শেষে বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, অর্ডার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমারা নিটওয়্যার পণ্য সবচেয়ে বেশি রফতানি করি ইতালিতে। সেখানে এখন ভয়াবহ অবস্থা। ইউরোপের অন্যান্য দেশও খারাপ অবস্থা। তাই অহেতুক ফ্যাক্টরি চালিয়ে রিস্ক নেবো না।
তিনি বলেন, আগামী ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তার প্রেক্ষিতে আমরা পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত আমাদের সদস্যদের জানিয়ে দেব, আমরা বন্ধে যাচ্ছি না অর্ধেক করে ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। তবে ফ্যাক্টরিগুলোকে আমরা বন্ধ করতে বলব না। কেউ যদি তার ফ্যাক্টরিতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারে, তাহলে সে ফ্যাক্টরি চালু রাখতে পারবে।
এসআই/জেএইচ/এমকেএইচ