‘করোনার কারণে আমাগো পেডে লাথি পড়ছে’

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০

‘স্যার, আমার স্বামী অসুস্থ, কাম করতে পারে না। আমি আর আমার বাচ্চারা নীলক্ষেতের এই মোড়ে ফুল বিক্রি করি। সকাল ১০টা থাইক্যা রাত ৮টা পর্যন্ত ফুল বেইচ্যা যা রোজগার অইতো তা দিয়াই সংসার চালাই। দেশে করোনা না জানি কি আইছে, গত দুইদিন ধইরা আর ফুল বেচতে পারতাছি না। আয় রোজগার বন্ধ। করোনার কারণে তো আমাগো পেডে লাথি পড়ছে।’

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দুপুর আনুমানিক ১টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ের অদূরে ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের বন্ধ দোকানের সিঁড়িতে স্বামী ও তিন সন্তানসহ চুপচাপ বসেছিলেন ফুল বিক্রেতা কুলসুম। ওদের পাশে দাঁড়িয়ে ও বসে আরও কয়েকজন শিশু। ওরাও নীলক্ষেত মোড়ে লুচনি বিক্রি করতো।

তাদের ওভাবে বসে থাকতে দেখে টহল পুলিশের একটি গাড়ি থেকে ধমকের সুরে ঘরের বাইরে কেন জানতে চাইলে, কুলসুম এভাবেই তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। কুলসুমের কথা শুনে পুলিশের টহলগাড়ির সামনে বসে থাকা একজন কর্মকর্তা ‘এসব শুনতে চাই না, তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে যা’ বলে গাড়ি নিয়ে দ্রুত সামনে এগিয়ে গেলেন।

jagonews24

কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক সামনে এগিয়ে যেতেই একটি শিশু এসে ‘দশটা ট্যাকা দেন, ভাত খামু’ বলে ছোট্ট হাতটি এগিয়ে দেয়।

সরকারি নিষেধ থাকার পরও কেন এই শিশুদের নিয়ে এখানে এসেছেন, জানতে চাইলে ফুল বিক্রেতা কুলসুম বলেন, ‘পেটে তো নিষেধ মানে না। গত দুদিন রোজগার বন্ধ। হাতে থাকা কিছু টাকা দিয়া পোলাপাইনরে রুটি কলা কিইন্যা খাওয়াইছি। আইজ পরিচিত এক সাহেব এখানে থাকতে কইছে। কিছু চাউল, ডাল, তেল আর আলু দিবো। এগুলো নিতেই আইছি।’

পুলিশের টহল গাড়ি দেখে রাস্তাঘাটের মানুষরা ভয় পেলেও কুলসুম, তার সন্তান ও অন্য ছোট্ট শিশুদের এতটুকু ভীত মনে হলো না। যে শিশুটি প্রথমে টাকার জন্য হাত পেতেছিল তার হাতে ১০টা টাকা দিয়ে পুলিশকে ভয় পায় কি-না জিজ্ঞাসা করতেই ঘাড় বেঁকিয়ে না সূচক জবাব দিয়ে বলে, ‘ভয় পামু কেন? এই এলাকাতেই তো হারাদিন (সারাদিন) কাটাই। হেরা (পুুলিশ) আমাগোরে চিনে।’

এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।