জনশূন্য রাস্তার ফুটপাতে চোখ শীতল করা নামাজ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:২৫ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২০

নীরব-নিস্তব্ধ চারপাশ। মাঝেমধ্যে ঘেউ ঘেউ করে চলেছে কুকুর। ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন বাতির আলো পড়েছে গাছে, সেই গাছের ছায়া পড়েছে রাস্তায়। নিস্তব্ধতা ভেঙে মাঝেমধ্যে দু-একটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার হাওয়ার বেগে ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যে। হঠাৎ করে ফুটপাতে চোখ পড়তেই চমকে উঠতে হলো। প্রায় জনশূন্য রাস্তার ফুটপাতে চটের বস্তাকে জায়নামাজ বানিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন মধ্যবয়সী লোকটি। তার আশেপাশে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে কি-না সেদিকে তার খেয়াল নেই।

নীলক্ষেত থেকে পলাশী বাজার যাওয়ার মাঝামাঝি রাস্তায় তখন বড় জোর ৮টা বাজে। এ রাস্তাটি স্বাভাবিক সময়ও অপেক্ষাকৃত ফাঁকা থাকে। মোটামুটি রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে সরকারঘোষিত টানা ১০ দিনের ছুটির কারণে এই এলাকা যেন আরও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

এমনই নিরালায় ফুটপাতে মধ্যবয়সী লোকটিকে নামাজ পড়তে দেখে কৌতুহল জাগলো। এগিয়ে গিয়ে একটু অপেক্ষা করতেই তার নামাজ শেষ হয়। জানতে চাইলে পরিচয় বলেন, নাম রহিম মিয়া। পেশায় রিকশাচালক।

Inner

আলাপে জানান, অদূরে ফুটপাতে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। করোনাভাইরাসের কারণে ভীত হয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। রাস্তাঘাটে মানুষ না থাকায় রিকশা চালিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। ফুটপাতে থাকার অভ্যাস থাকলেও বর্তমান অবস্থায় একা একা থাকতে তার ভয় লাগছে বলে জানান রহিম মিয়া।

এদিকে রাতে পুরান ঢাকার লালবাগসহ আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, করোনার বিস্তাররোধে সরকার সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানালেও লোকজন যেন একদিন বাসায় বন্দি থাকতেই হাঁপিয়ে উঠেছে। কেউ ডিম, কেউ রুটি, কেউবা শাক-সবজি কেনার উসিলায় রাস্তায় বেরিয়েছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে যেন পড়তে না হয় সেজন্য প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরিচিতজনদের সাথে কথাবার্তা বলছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘ঘরে বসে সময় যে আর কাটে না!’ যদিও সচেতন কেউ কেউ বলছেন, করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এই সময়টুকু সরকারের নির্দেশনা মানতেই হবে।

Inner

অন্য সময় রাজধানীর চকবাজার এলাকা হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত, কেনাকাটা, মালামাল ওঠানো-নামানো ইত্যাদি কাজে রাত ১০টা এগারোটা পর্যন্ত সরগরম থাকলেও আজ চারিদিকে সুনসান নীরবতা। মদিনা টাওয়ারের সামনে নিরাপত্তারক্ষীদের নিচু স্বরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে শোনা যায়। শাহী মসজিদের সামনে এক তরুণকে মাস্ক বিক্রি করতে দেখা যায়।

বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশের টহল গাড়ি থেকে মাইকে বারবার লোকজনকে ঘরে অবস্থান করতে বলতে শোনা যায়। জনশূন্য রাস্তায় মাইকের শব্দ বহুদূর ভেসে যায়। চোখ যেদিকে যায়, যেন অজানা-অচেনা এক ঢাকা।

এমইউ/এইচএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।