‘করোনার চাইতেও পেডের ক্ষুধা বড় ভাইরাস’
‘করোনারে ভয় করি না। ভয় করলে বাপ মা ভাইবোন না খাইয়া মরবো। পেডের ক্ষুধা করোনার চাইতে বড় ভাইরাস। তাই রাস্তায় নামছি। আল্লাহ মরণ রাখলে মরুম।’
শনিবার (২৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অদূরে হাইকোর্টের সামনে রিকশার সিটে বসে এ কথা বলছিলেন একজন নারী রিকশাচালক। মাথায় ক্যাপ, মুখে মাস্ক তার। একটু আগে মোবাইল ফোনে পরিচিত কাউকে ওএমএসের তেল, চাল, ডাল ও আটার দাম জানিয়ে বাসায় ফেরার সময় নিয়ে যাবেন বলছিলেন।
করোনার সংক্রমণের ভয়ে সরকারি নির্দেশে যখন যান্ত্রিক নগরী ঢাকার পথঘাট জনশূন্য তখন সংসারের চাকা সচল রাখতে ও পেটের তাগিদে ভাড়ার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন নূরজাহান নামের এক তরুণী। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্বামী পরিত্যক্তা এক বোন ও তার সন্তান এবং এক ভাইসহ ছয় সদস্যের পরিবার তার।
রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা রিকশাচালক নূরজাহান বেগম বলেন, পরিবারের কথা চিন্তা করে বিয়ে করিনি। আগে গার্মেন্টেসে কাজ করতাম। কিন্তু গার্মেন্টেসে আসা-যাওয়ার পথে বছরখানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হই। কিছুদিন বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলাম। এরপর আর চাকরিতে যাইনি। এ সময় অভাব অনটন দেখা দেয়। সুস্থ হয়ে স্থানীয় এক গ্যারেজের মালিককে অনুরোধ করে ভাড়া নিয়ে স্থানীয় একটি মাঠে রিকশা চালানো শিখি।
নূরজাহান জানান, আট মাস ধরে দৈনিক ৩০০ টাকা ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। জমার টাকা বাদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু করোনার কারণে রাজধনীর রাস্তাঘাট ফাঁকা ও জনশূন্য হওয়ায় আয় রোজগার কমে গেছে।
কথা প্রসঙ্গে জানান, হাজারীবাগ থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বরে অন্য সময় কমপক্ষে ১৫০ টাকা ভাড়া হলেও আজ মাত্র ৮০ টাকায় এসেছেন। রাস্তাঘাটে লোকজন না থাকায় মতিঝিল থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত যাত্রীর দেখা পাননি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নূরজাহান।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নিজের একটা রিকশা থাকলেও যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে চলতে পারতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় ৩০০ টাকা জমা দিয়ে কত টাকা রোজগার করতে পারবেন, সে টাকায় সংসার চলবে কিনা তা অনিশ্চিত। চলে যাওয়ার সময় নিজ থেকেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেন, আমি কিন্তু মোবাইলে ডাকলেও যাত্রীর কাছে হাজির হই। এ কথা বলেই ব্যাটারিচালিত রিকশাটি নিয়ে দ্রুতগতিতে সামনে যাত্রীর সন্ধানে ছুট ছিলেন তিনি।
এমইউ/এএইচ/এমকেএইচ