৪ দিন সাপোর্ট দিতে পারবে ডা. স্বাক্ষরদের উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটর
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে প্রথম ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস মেশিন) তৈরি করেছেন ডা. কাজী সিফায়েত ইনাম স্বাক্ষর ও ইঞ্জিনিয়ার বায়েজীদ শুভ।
দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ভেন্টিলেটরের নাম দেয়া হয়েছে ‘স্পন্দন’। তাদের এই আবিষ্কার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা।
এই প্রযুক্তির বিষয়ে ডা. স্বাক্ষর বলেন, এক বছর আগে এই ধারণাটি আমাদের মাথায় আসে। ঢাকা মেডিকেলে এফসিপিএস ট্রেইনি কার্ডিওলজির ওপর দুই বছরের প্রশিক্ষণ চলাকালীন দেখা গেছে,, আমাদের কাছে যেসব রোগী আসে তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র। এক থেকে দুদিন আইসিইউ'র (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) সাপোর্ট দেয়া গেলে তাদের অনেকের জীবন রক্ষা পেত। ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ বেড সব সময় পূর্ণ থাকে। তাছাড়া খরচও অনেক বেশি। ফলে দেখা যায়, অনেক রোগী আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই।
তিনি বলেন, সেই সময় থেকে মাথায় কাজ করছিল যদি আমরা খুব সাধারণভাবে ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারি, যেটা অন্তত ৭২ ঘণ্টা থেকে চারদিন পর্যন্ত সাপোর্ট দিতে পারবে। সেরকম একটি বেসিক ভেন্টিলেটর বানাতে পারলে অনেকগুলো জীবন রক্ষা পেতে পারে। পরবর্তীতে আমার আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার শুভর সঙ্গে এটা নিয়ে আলাপ করি। গত ছয় মাস আগে মূল ধারণাটি মাথায় রেখে একটি ডিজাইন তৈরি করি আমরা। ব্যস্ততার কারণে কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন লক্ষ্য করলাম যে উন্নত বিশ্বের দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ অন্যান্য দেশে সবাই মোটামুটি একটি সংকটে ভুগছে সেটা হচ্ছে ভেন্টিলেটর। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও সেই তুলনায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা খুবই কম।
ডা. স্বাক্ষর বলেন, বিশ্বব্যাপী মেডিকেল কোম্পানির ভেন্টিলেটর সাপোর্টও সীমিত। যেগুলো আছে সেগুলো প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়লে অবস্থা খারাপ হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে এক সপ্তাহ ধরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত শনিবার পুরো বিষয়টির একটি প্রাথমিক কাজ শেষ করেছি। যেহেতু এটি একটি মেডিকেল পণ্য সেক্ষেত্রে এটি বাজারে আনতে কিছুটা আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা একটি স্যাম্পল ইতোমধ্যে তৈরি করেছি যেটার পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে আরও অনেকগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। চূড়ান্তভাবে বাজারে আসতে সময় লাগবে আরও কিছুদিন। এছাড়া ফান্ড সরবরাহের কিছু ব্যাপার আছে। যদি আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ এবং দ্রুত কাজগুলো গুছিয়ে ফেলতে পারি, তাহলে আগামী এক মাসের মধ্যে বড় পরিসরে উৎপাদন কাজ শুরু করতে পারবো। বাজারে প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ ভেন্টিলেটরের মূল্য পাঁচ লাখ থেকে শুরু হলেও করোনার মহামারি ঠেকাতে আমাদের বেসিক ভেন্টিলেটরের প্যাকেজটির মূল্য হবে এক লাখ টাকার মধ্যে। যেটা সব শ্রেণির মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকবে। যেহেতু পণ্যটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে সেক্ষেত্রে যাচাই বাছাইয়ের পর যদি আমরা পূর্ণাঙ্গ সার্টিফিকেট পাই তখন আমরা ছোটখাটো একটি ফ্যাক্টরির মতো চালু করবো।
ডা. কাজী সিফায়েত ইনাম স্বাক্ষরের জন্ম কুমিল্লার গোবিন্দপুরে। মা সাহিদা খাতুন কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা। বাবা কাজী এনামুল হক ব্যবসায়ী। স্বাক্ষরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ক্যান্টনমেন্ট কোয়ার্টারে। ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমানে এফসিপিএস কার্ডিওলজির ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়।
এমএসএইচ/জেআইএম