মরার পর জানা গেল করোনা, সাতকানিয়ায় কোয়ারেন্টাইনে ৩৭১২ জন

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর পর সাতকানিয়া উপজেলার ৩৯০ পরিবারের তিন হাজার ৭১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে ওই রোগীর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, লাশ ধৌতকারী, দাফনকারী, জানাজার ইমাম ও জানাজায় উপস্থিত বিপুল লোকজন রয়েছেন।
রোববার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বিষয়টি জাগো নিউজকে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে আলম।
করোনায় মৃত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম (৬৯)। তিনি উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা এলাকার আলী নগরের ইছামতি গ্রামের বাসিন্দা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি চট্টগ্রাম নগরের ফকিরহাটে ব্যবসা করতেন। ১৭ দিন আগে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি নিজ বাড়ি সাতকানিয়ার ইছামতি নগরের ইছামতি গ্রামে চলে যান। পরে সেখান অবস্থার অবনতি হলে ১ এপ্রিল রাতে উপজেলার কেরাণীহাটে বেসরকারি আশ শেফা হাসপাতালে ভর্তি হন। ২ এপ্রিল করোনা সন্দেহে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) রেফার করেন চিকিৎসক। পরে চমেকে আনার পথেই ওইদিনই রোগীর মৃত্যু হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। রোগী শহরে ব্যবসা করলেও কিছুদিন আগে বাড়ি ফেরেন। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। পরে চট্টগ্রামে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। তবে রোগীর করোনা উপসর্গ থাকায় চমেক হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়। শনিবার নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট করোনা পজেটিভ এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে খবর পেয়েই বৃদ্ধের বাড়ি গিয়ে প্রথমেই তার বাড়ি লকডাউন করি। পরে মরদেহ যারা গোসল করিয়েছেন, কবর দিয়েছেন, তাকে ধরে কান্নাকাটি করেছেন, দাফন কাজে অংশ নিয়েছেন, জানাজার ইমাম ও জানাজায় উপস্থিত লোকজন সবার তালিকা করেছি। তালিকায় পশ্চিম ঢেমশা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৯০টি পরিবারের তিন হাজার ৭১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই গ্রামের সব প্রবেশ পথে আমরা পাহারা বসিয়েছি। আগামী ১৫ দিন কেউ এই গ্রামে প্রবেশ করতে পারবে না, আবার বের হতেও পারবে না। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব মানতে আশপাশের এলাকার মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই গ্রামের কেউ যাতে গ্রাম থেকে বের হতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।’
চট্টগ্রামে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত সমন্বয় সেলের দায়িত্বে থাকা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, ৬৯ বছর বয়সী ওই করোনা রোগী তার নিজ বাড়ি সাতকানিয়ার ইছামতি আলিনগর থেকে ৮ জন স্বজনকে সঙ্গে করে কেরাণীহাট আশ শেফা হসপিটালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তিনি শ্বাসকষ্ট, শুকনা কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। আবাসিক চিকিৎসক পিপিই পরিহিত অবস্থায় ওই রোগীর পর্যবেক্ষণ শেষে করোনা সন্দেহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন এবং স্বজনদের সতর্ক করেন। পরে ওই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স যোগে রোগীকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
‘সন্দেহভাজন করোনা রোগী হওয়ায় বৃহস্পতিবার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়, শনিবার তার নমুনায় করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয় বিআইটিআইডি।’
আবু আজাদ/এসআর/এমএস