বুড়িগঙ্গার দূষণ কমেছে!‌‌

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রবেশের প্রতিটি গেটেই তালা ঝুলছে। দু-চারজন ভবঘুরে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে বসে আছে। একটি গেট খোলা দেখে প্রবেশ করতে যেতেই পথ আগলে দাঁড়ালেন একজন আনসার সদস্য। পরিচয় দেয়ার পর ‘একটু দাঁড়ান’ বলে ভেতরে কারও সাথে কথা বলতে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, ‘দুঃখিত, কিছু মনে করবেন না, বন্দর পরিচালকের অনুমতি ছাড়া টার্মিনালে প্রবেশ করা যাবে না।’ এ কথা বলে মোবাইল নম্বর দিলেন। বন্দর পরিচালক অবশ্য গণমাধ্যমকর্মী শুনে মোবাইল ফোনে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।

বাইরে থেকে আঁচ করতে পারলেও ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হলো এ যেন অচেনা এক সদরঘাট। চিরায়িত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সামনের রাস্তায় দিনভর যানজট, পরিবার-পরিজন, বাক্সপেটরা নিয়ে হাজার হাজার যাত্রীর লঞ্চঘাট অভিমুখে অবিরাম পদচারণা, ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের ফল বিক্রেতাদের উচ্চস্বরে হাঁকডাক, কুলিদের ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি, ছোটবড় জাহাজ ও লঞ্চের বিকট শব্দে সাইরেন সবকিছু যেন কর্পূরের মতো উবে গেছে।

Burigonga

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভয়ংকর ছোঁয়াচে রোগ করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সদরঘাট থেকে সারাদেশে নৌপথে চলাচল বন্ধ থাকায় সদরঘাট এখন জনমানবশূন্য মৃতপ্রায় এক টার্মিনাল।

Burigonga

টার্মিনাল থেকে ঢালু সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই সবুজ তরতাজা কয়েকটি বেগুনীরংয়ের ফুলসমেত কচুরিপানা ভাসার দৃশ্য চোখে পড়ল। বিশাল টার্মিনালে কোনো জাহাজ কিংবা লঞ্চ নেই। চারদিকে ধু ধু শূন্যতা। টার্মিনালের বিপরীতে দক্ষিণ পাড়ে হাতেগোনা কয়েকটি জাহাজ নোঙর করে আছে। করোনার কারণে সরকারিভাবে অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষেধ থাকায় সদরঘাট টার্মিনালের বিপরীত দিকে কেরানীগঞ্জের রাস্তাঘাটও জনমানবশূন্য।

Burigonga

স্বাভাবিক সময়ে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি আলকাতরার রংয়ের মতো কালো দেখালেও সে তুলনায় পানিটা কিছুটা স্বচ্ছ মনে হলো। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢেউয়ে পানি বয়ে চলেছে। সাথে কচুরিপানাও ভেসে যেতে দেখা যায়। করোনা জনজীবন স্থবির করে দিলেও বুড়িগঙ্গা নদীকে নবযৌবন ফিরিয়ে দিচ্ছে।

Burigonga

কিছুদিন আগেও ময়লা পানির দুর্গন্ধে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা দায় হলেও নাকে দুর্গন্ধ অনেকটা কম লাগল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বুড়িগঙ্গা নদীতে কোনো যান চোখে পড়েনি। হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর স্পিড বোটের টহল দেখা গেল।

শান্ত বুড়িগঙ্গা অচেনা এক নদী দেখে ফিরে আসার সময় সেই আনসার সদস্য বললেন, ‘করোনার কারণে মানুষের অশান্তি অইলেও বুড়িগঙ্গা নদীর শান্তি অইছে।’

এমইউ/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।