পিপিই পরিহিতরা জানাজা পড়িয়ে খালাস, দাফন করল পরিবার
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) পুরো জাতি যখন ঘরবন্দি, তখন চট্টগ্রামের পটিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক শিশু সন্তানের পাশে মা-বাবাসহ ঘনিষ্ঠজনদের ছবি এখন ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সোমবার (১৩ এপ্রিল) করোনায় মারা যায় ওই শিশু। তার নাম আশরাফুল।
এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ বলছে, করোনা নিয়ে এত প্রস্তুতির কথা বলা হলেও আসলে অন্য কিছু হচ্ছে, যা কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পটিয়া কবরস্থানে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরে চারজন লোক দাঁড়িয়ে। তার অদূরে করোনায় মারা যাওয়া শিশুটির লাশ কোলে একজন দাঁড়িয়ে। তার আশপাশে আরও দুজন, যাদের কেউই পিপিই পরিহিত নয়।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ছবিতে লাশ কোলে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির নাম মো. টিপু। সম্পর্কে তিনি মারা যাওয়া শিশু আশরাফুলের চাচা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. টিপু বলেন, ‘সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে চারজন লোক দিয়েছিল। তারা পিপিই পরা ছিল। তবে তারা লাশের গোসল বা কবরে নামানোর ব্যাপারে কোনো সহায়তাই করেনি। শুধু জানাজা পড়া আর লাশ ধোয়ানোর বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে মাত্র। তাদের পরিবারের কেউ জানাজা বা লাশ ধোয়ানোর সময় পিপিই বা প্রতিরোধমূলক কোনো কিছুই পায়নি। শিশু আশরাফুলকে গোসল করানো, কবরে নামানো, দাফন-সবই তার বাবাসহ আমরা নিজেরাই করেছি।’
তিনি আরও জানান, শুধু লাশ চট্টগ্রাম হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনার সময় তিনটি পিপিই দেয়া হয়েছিল, যা আশরাফুলের মা, দাদি ও অপর একজন পরেছিলেন।
শিশুটির মৃত্যুর পর আশপাশের দুই হাজার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
তবে আশরাফুল করোনায় আক্রান্ত ছিল কি-না, তা জানত না তার পরিবার। টিপু বলেন, ‘৬ বছরের শিশু আশরাফুল জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। সে হাঁটতে পারত না, এমনকি ভালোভাবে কথাও বলতে পারত না। অসুস্থ হওয়া, হাসপাতালে যাওয়াসহ সবসময় টিপুর মা, বাবা, দাদি আর খালা পাশে ছিল। যদি শিশু আশরাফুল করোনায় মারাই যায়, তাহলে অন্যদের যা ক্ষতি বা করোনা সংক্রমণ তা তো আগেই হয়ে গেছে।‘
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জাহান উপমা দাবি করেছেন, শিশুটির মৃত্যুর পর মা, বাবাসহ পরিবারের চারজনকে পিপিই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেগুলো ব্যবহার করেননি। শিশুটির পরিবারের বক্তব্য ছিল, করোনা সংক্রমণ যদি হয় তা আগেই হয়ে গেছে, এখন আর কী হবে!
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে আমাদের দায়িত্বশীলদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বলতে কিছু নেই। যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রী কোনো বিষয়ে বলবেন না ততক্ষণ তারা নিজে থেকে কিছু করার প্রয়োজন অনুভব করেন না। নয়তো যেখানে করোনা রোগী দাফনে বিশ্ব সংস্থার প্রণীত বিধিবিধান রয়েছে, সেখানে নিজেরা দর্শক সেজে একটি পরিবারকে এভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়ার মতো অবস্থা কীভাবে হলো?’
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুসারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হবে। এছাড়া জানাজা ও দাফনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত এই শিশুটির ক্ষেত্রে এর কোনোটাই মানা হয়নি।
আবু আজাদ/এসআর/এমকেএইচ