১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত বেড়েছে ৩০ গুণ, মৃত্যু ১০ গুণ

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২০

রাজধানীসহ সারা দেশে গত ১৫ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ গুণ ও মৃতের সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে। গত ১ এপ্রিল সারা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৪ জন। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৭২ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে।

এ পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৩৫টি নমুনা সংগ্রহ ও তার মধ্যে ২ হাজার ১৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২৪ ঘণ্টায় এ পর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ ৩৪১ জন আক্রান্ত ও ১০ জনের রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তার ১০ দিন পর দেশে প্রথম করোনাভা আক্রান্তে একজনের মৃত্যু হয়। এরপর প্রথম দিকে হাতেগোনা কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মেলে। কিন্তু গত কয়েক দিনে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা।

বিশেষ করে গত ৫ এপ্রিল থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮৮, ১২৩, ১৬৪, ২১৮, ৩৩০, ৪২৪, ৪৮২, ৬২১, ৮০৩, ১০১২, ১২৩১ ও ১৫৭২ জনে। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যথাক্রমে ৮, ১২, ১৭, ২০, ২১, ২৭, ৩০, ৩৪, ৩৯, ৪৬, ৫০ ও ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে।

আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার তুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা অনেক কম। গত ৫ এপ্রিল সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ জন। গত ১০ দিনে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৯ জনে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লেও রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জই হটস্পট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের জেলা-উপজেলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও আইসোলেশন হাসপাতাল, সম্ভাব্য করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি চালু, আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ আইসিইউ বেড প্রস্তুত এবং কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

চিকিৎসক ও নার্সসহ দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণের আশঙ্কায় লকডাউন করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় মসজিদে ওয়াক্তের নামাজ ও শুক্রবার জুমার নামাজে গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। সম্ভাব্য সব প্রস্তুতির পরও এ ভাইরাসের সংক্রমণ কবে নাগাদ বন্ধ হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, সারা দেশে মোট আইসোলেশন বেড রয়েছে ৬ হাজার ৯৭৭টি। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় এক হাজার ৫৫০টি ও ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ৪২৭টি রয়েছে। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৯২টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিটের সংখ্যা ৪০টি। সারা দেশে ৬৪ জেলায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৪৮৮টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টাইন করা যাবে ২৬ হাজার ৩৫২ জনকে।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এখন ৪৬১ জন আইসোলেশনে আছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৯ জন।

গত ২৪ ঘণ্টা হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে চার হাজার ৪৯৯ জনকে। এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৯৯ হাজার ২০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ৭১৫ জনকে। এখন মোট তিন হাজার ৮৭৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ২১৪ জনকে। আর এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ তিন হাজার ৭৯ জনকে নেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন নয় হাজার ২৫ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৭০৫ জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ নীতিনির্ধারকদের সবাই বলছেন, সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও মূলত দেশের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের ওপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নির্ভর করে ও করবে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হলে, বের হলেও মাস্ক পরিধান করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার ওপর নির্ভর করবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বৃহস্পতিবার ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, দেশের মানুষকে ঘরের বাইরে না থাকা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মানুষকে নিরাপদে থাকার জন্য ফের অনুরোধ জানান তিনি।

এমইউ/এমএসএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।