৬ জনের জন্য দুটি মাস্ক, বিআইটিআইডিতে খাবার পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে চলছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাও। সেখানে জীবনবাজি রেখে করোনা পরীক্ষা আর রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা। করোনাযুদ্ধের সেই সৈনিকরাই এখনো পাননি এন-৯৫ মাস্ক, দিন শেষ পাচ্ছেন না খাবারও। এমন অভিযোগই মিলেছে হাসপাতালটিতে কর্তব্যরতদের কাছ থেকে।
ইতোমধ্যে বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সদের নিজ খরচে খাবার সংগ্রহের জন্য আদেশ জারি করেছে। বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এমএ হাসান চৌধুরী স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, চিকিৎসক ও নার্সকে দুপুরের খাবারের জন্য আগের দিন রাতে ও রাতের খাবারের জন্য ওইদিন সকালে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীকে নিজ খরচের খাবার সংগ্রহ করতে হবে।
ফলে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজ খরচে খাবার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত মাস্ক না থাকায় একজনের মাস্ক অন্যজন ব্যবহার করছেন। অথচ সরকারের তরফে বারবার বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনামূল্যে খাবার ও পর্যাপ্ত সামগ্রী সরবরাহ করা।
সূত্র জানায়, বিআইটিআইডি আইসোলেশন ইউনিটে বর্তমানে ১১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জন করোনা আক্রান্ত। প্রতি শিফটে দুইজন করে মোট ছয়জন নার্স এসব রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। কিন্তু নার্সদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক সরবরাহ করেনি কর্তৃপক্ষ।
বিআইটিআইডির সিনিয়র স্টাফ নার্স তানজিমা চৌধুরী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, সারারাত আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ শেষ নাস্তা করতে গিয়ে শুনি, নাস্তা নেই। বাজেট না থাকায় কর্তৃপক্ষ নাস্তা দিতে পারবে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, নিজের খাবার নিজেকে জোগাড় করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। এখন ছয়জনের জন্য দুটি এন-৯৫ মাস্ক রয়েছে। একজনের মাস্ক অন্যজন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আমাদের বাধ্য হয়ে তা করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইটিআইডি এক চিকিৎসক বলেন, খাবার সরবরাহ দূরে থাক, যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ইতোমধ্যে করোনা রোগীদের সেবা দিয়েছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি। আগে যারা সেবা দিয়েছেন, তারা এখনো বিআইটিআইডিতে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এমএ হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে করোনা চিকিৎসা ও ল্যাবে কর্মরতদের হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। তাদের বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সদের খাবার সরবরাহের জন্য আমরা কোনো ফান্ড পায়নি। তাই উনাদের নিজেদের খরচে মেসে খেতে বলা হয়েছে। পরে ফান্ড আসলে যার যার টাকা দিয়ে দেয়া হবে।’
করোনা থেকে বাঁচতে চিকিৎসক ও নার্সদের এন-৯৫ মাস্ক না পাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমারতো মনে হয় বাংলাদেশের কেউ এন-৯৫ মাস্ক পাননি। তবে কাছাকাছি মানের কেএম-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করছি আমরা। এ পর্যন্ত পাওয়া পিপিইগুলো লেভেল-৩ পর্যায়ের।’
ইতোমধ্যে সিলেটের একজন চিকিৎসক পিপিই ছাড়া সেবা দিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে একজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ এর আগে সরকারের তরফে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের সবধরনের দায়িত্ব নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে নির্দেশনা জারি করেছিল। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করে।
আবু আজাদ/বিএ