পাঞ্জাবে আটকা ৩০০ শিক্ষার্থীর দেশে ফেরার আকুতি
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ভারতের পাঞ্জাবে যাওয়া ৩০০ শিক্ষার্থী মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের অনেকেরই ডুয়েল কারেন্সি কার্ড না থাকায় দেশ থেকে টাকা নিতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা খাদ্য সমগ্রীসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা যায়, পাঞ্জাবের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে আটকা পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। পোস্ট গ্রাজুয়েট, গ্রাজুয়েট, ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের নতুন নতুন প্রযুক্তিবিদ্যা, হোটেল ম্যানেজমেন্টসহ নানা বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য সেখানে গেছেন শিক্ষার্থীরা। ভারত সরকারের কমিউনিকেশন এবং আইটি বিভাগ থেকে শ্রেষ্ঠ সম্মান পাওয়া লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশে থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী যান। কিন্তু এমন নজিরবিহীন বিড়ম্বনায় আগে কেউ পড়েনি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সৌদিতে আটকে পড়া ১৪৪ বাংলাদেশি ওমরাহ এবং সৌদির বিভিন্ন কারাগারে থাকা ১৬৮ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। ১৫ এপ্রিল সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৩৮০৬ ফ্লাইটটির মাধ্যমে ঢাকায় পৌঁছান তারা। এছাড়া এর আগে চীনের উহান থেকেও শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরানো হয়। এইসব শিক্ষার্থীরা সেরকম বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা ফিরতে চান।
পাঞ্জাবে আটকা কস্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফয়সাল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন,‘আমরা এখানে অনেকেই আটকা পড়েছি। ভারতে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যা আমাদের ভয়ের কারণ। এছাড়া টাকা আনতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ ওয়েস্টার্ন মানি বন্ধ। আর সরকার বলছে যাদের ডুয়াল কারেন্সি কার্ড রয়েছে তারা বাংলাদেশ থেকে টাকা আনতে পারবে। কিন্তু যাদের এ কার্ড নেই তাদের কী হবে। খাবার সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে সীমিত। কিন্তু যা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আমরা হাইকমিশনে অনেক বার ফোন করেছি। প্রথম প্রথম যখন আমরা কল দিয়েছি তখন তারা উত্তর দিয়েছে। কিন্তু এখন অনেক বার ফোন দিলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে হাইকমিশনের সঙ্গে অনেক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। হাইকমিশনকে এটাও বলছি যে, আমরা কোয়ারেন্টাইনে থাকতেও রাজি আছি। এখন আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করছি। যাতে অতি দ্রুতই দেশে ফিরতে পারি।’
ফিজিওথেরাপি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তামিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি বেশ কয়েকবার। প্রথম দিকে তারা সাহায্য করার কথা বললেও এখন কল রিসিভ করে না। ইমেলের উত্তরও দিচ্ছে না। আমরা এখানে খাদ্য ও টাকার সমস্যায় রয়েছি, ইউনিভার্সিটি সঙ্গে কন্টাক্ট করলেও তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি ব্যতীত সাহায্য করতে অপরগতা প্রকাশ করেছে।’
হোটেল ম্যানেজমেন্টের প্রথম বর্ষের ছাত্র অংকন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা বাসায় ফিরতে চাই। এখানে আটকে থাকায় দেশের সবাই চিন্তিত। হাইকমিশন থেকে ঠিকমত সহযোগিতা পাচ্ছি না। সৌদিতে আটকা পড়াদের মত বিশেষ ব্যবস্থায় আমাদেরও দেশে ফেরানো হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ‘এখানে আটকে পড়া ভুটান ও নেপালের শিক্ষার্থীদের সেসব দেশের সরকার দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নেই।’
জানা গেছে, পাঞ্জাবের শিক্ষার্থী ছাড়াও সেখানে কয়েক হাজার বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। এনিয়ে জাগো নিউজ সিরিজ প্রতিবেদন করে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও ভারতে লকডাউন চলায় সেটা সময় সাপেক্ষ বলে জানানো হয়।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশে হাই কমিশনের হটলাইনে যোগাযোগ করলে জাগো নিউজকে জানানো হয়, ‘ভারতে লকডাউনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় এ মুহূর্তে বিমান পথে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভারত সরকার লকডাউনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ সত্ত্বেও হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রত্যাবর্তনের অনুমোদনের জন্য নিরন্তর যোগাযোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এইচএস/এএইচ/এমএস