নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ীও ত্রাণের লাইনে

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:১৫ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২০

‘উনি তো নিউমার্কেটের কাপড়ের ব্যবসায়ী। এডাতো আমাগো জন্যে আর উনি আইসা নিয়া গেল। উনার মতো ব্যবসায়ীরা আইস্যা নিয়া যায় গরিবের খাবার। হেগোর মতো মাইনষের লাইগ্যা আমাগো মতো গরিবরা খাবার পায় না।’

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১টায় নিউমার্কেট পোস্ট অফিসের অদূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শাহনেওয়াজ আবাসিক হোস্টেলের প্রধান ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলেন মজনু মিয়া নামের এক রিকশাচালক।

Newmarket-2

এ সময় হোস্টেলের প্রধান ফটকের ভেতর থেকে ‘স্বপ্নচাকা ফাউন্ডেশন’ নামক এক সংগঠনের ব্যানারে দরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের সবজি বিতরণ করা হচ্ছিল। মজনু মিয়ার হৈচৈ করার মিনিট খানেক আগেই কেতাদুরস্ত এক ভদ্রলোক (ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি ও নতুন কালি করা স্যান্ডেল জুতা পরিহিত) হাত বাড়িয়ে বিনামূল্যের সবজির প্যাকেট নিয়ে নেন। রিকশাচালক চিৎকার করে এসব বলায় ওই ভদ্রলোক বিব্রতবোধ করছিলেন।

কৌতূহলবশত জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক তাকে পাশে ডেকে নিয়ে কারণ জানতে চাইলে তিনি ইতস্তবোধ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে জানান, নিউমার্কেটের ভেতরে ফুটপাতে তার কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ থাকায় রোজগারও বন্ধ। এমতাবস্থায় বাড়িভাড়া, ছয় সদস্যের পরিবারের খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আজ বাজার করতে এসেছিলেন। বিনামূল্যে সবজি বিতরণ করতে দেখে তিনি হাত বাড়িয়ে এক প্যাকেট নেন।

Newmarket

প্রায় এক মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় এ ভদ্রলোকের মতো ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। জমানো টাকা-পয়সা ফুরিয়ে আসায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও গরিবের ত্রাণে হাত বাড়াচ্ছেন। ভিড় করছেন স্বল্পমূল্যের ওএমএসের ট্রাকের সামনে। তাদের কারণে প্রকৃত দরিদ্ররা অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধরা ধাক্কাধাক্কি করে ত্রাণের পণ্য নিতে পারছেন না। আবার কোথাও কোথাও ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রাণ নিচ্ছেন।

জানা গেছে, স্বপ্নচাকা ফাউন্ডেশন নামে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে সবজি (টমেটো, বেগুন, করোল্লা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি) বিতরণ করছেন।

Newmarket

এ কার্যক্রমের সাথে জড়িত এক যুবক জানান, শুরুর দিকে তারা দরিদ্রদের যাচাই-বাছাই করে সবজি বিতরণ করলেও এখন আর তারা সেভাবে যাচাই-বাছাই করছেন না। পরিপাটি পোশাক পরিহিত অনেকেই করোনার কারণে বিপাকে পড়ে ত্রাণ নিতে হাত বাড়াচ্ছেন। তাদের লজ্জায় না ফেলে বরং সবজি দিয়ে সহায়তা করছেন তারা।

এমইউ/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।