নেই সচেতনতা, তালতলা মার্কেটে ঢুকতেও গাদাগাদি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৭ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২০

সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো প্রকার সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের মাছ-কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে। প্রতিটি দোকানের সামনেই গাদাগাদি করে দাঁড়াচ্ছেন ক্রেতারা। এমনকি মার্কেটে ঢোকার গেটেও মানুষের গাদাগাদি দেখা গেছে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর নাগরিকদের ঘরে থাকতে বলা হলেও শুরু থেকেই তা না মানার প্রবণতা দেখা যায় সর্বত্রই। তবে অন্য স্থানের তুলনায় বাজারে মানুষের আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সরেজমিনে তালতলা মার্কেটে দেখা যায়, মার্কেটের পোশাক, প্রসাধনী ও প্লাস্টিকের গৃহস্থলির সামগ্রীর দোকান বন্ধ। তবে খোলা রয়েছে চালের দোকানসহ অন্যান্য মুদি দোকান। সেই সঙ্গে খোলা রয়েছে সবজি ও মাছের দোকান।

সুপার মার্কেটের মধ্যে ভিন্ন ভিন্নভাগে গড়ে তোলা চারটি বাউন্ডারির মধ্যে পোশাক, চাল-মুদি, মাছ ও কাঁচাবাজার রয়েছে। এর মধ্যে একই বাউন্ডারির মধ্যে রয়েছে মাছ ও কাঁচাবাজার। মুদি ও চালের দোকান রয়েছে একটি বাউন্ডারির মধ্যে। মার্কেটের এই দুটি বাউন্ডারির মধ্যে ঢোকার যে গেট রয়েছে সেখানে সব সময় জটলা বেঁধে থাকছে। দোকানের সামনে গিজ গিজ করছে মানুষ।

মার্কেটের ভেতরে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই যতক্ষণ মার্কেটের দোকান খোলা থাকে, ততক্ষণ এমন ভিড় হয়। ভিড় করতে নিষেধ করলেও কেউ কথা শুনে না। সবাই এক সঙ্গে পণ্যের দাম জানতে চায়। কে কার আগে কিনবে এ নিয়েও যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতা হয়।

মার্কেটের ব্যবসায়ী আলম বলেন, এখানে প্রতিদিনই ক্রেতাদের ভিড় হয়। কারণ এই মার্কেটে এক জায়গা থেকেই ক্রেতারা কাঁচা সবজি ও মাছ ছাড়া সব ধরনের নিত্যপণ্য কিনতে পারেন। করোনাভাইরাসের ছুটির মধ্যে ভিড় কিছুটা কমেছে। এরপরও ভিড় লেগেই থাকছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আমরাও আতঙ্কে আছি। প্রথমদিকে ক্রেতাদের ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ কথা শোনে না। সবাই একসঙ্গে চলে আসে। গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। এ জন্য এখন কথা বলা বন্ধ করেছি। যার ইচ্ছা হয় সে নিজে থেকেই ফাঁকা হয়ে দাঁড়ায়।

মার্কেটে বাজার করতে আসা আমেনা নামের একজনকে অন্য এক ক্রেতার গা ঘেঁষে দাঁড়াতে দেখা যায়। এভাবে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটের ভেতরে জায়গা কম। এভাবে না দাঁড়িয়ে উপায় কী। করোনা নিয়ে ভয় করে কি হবে। করোনা যার হওয়ার তার এমনিই হবে।

মার্কেটের গেটে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জহিরুল বলেন, আগে এই মার্কেটের ভেতরে পাঁচটা গেট দিয়ে ঢোকা হতো। এখন একটা গেট দিয়ে ঢুকতে হয়। এতে গেটে ভিড় বেশি হয়। এরপরও মানুষের চলাচলে কোনো সমস্যা হয় না। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে বাজার করতে আসে। সারাদিনে যেটুকু রিকশা চালাই এখানেই থাকি। কোনো রকমে খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে পারি।

করোনায় ভয় করে না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভয় করলে তো খাবার পাবো না। তাছাড়া আমার মতো অনেকে এখানে আসে। এমনকি রাস্তা থেকে মার্কেটের ভেতরে ভিড় বেশি হয়। প্রতিদিনই এই মার্কেটে মানুষ গিজ গিজ করে।

মার্কেটের পাশের এক বাসার বাসিন্দা মিনহাজ বলেন, প্রতিদিন এই মার্কেটে শত শত মানুষ আসা যাওয়া করে। কারও মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। সবাই একসঙ্গে ভিড় করে। আমাদের এই দিক থেকে মার্কেটে ঢোকা ও বাহির হওয়ার গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও ভয় লাগে। কারণ এই মার্কেটে যেভাবে মানুষ যাওয়া আসা করে এখান থেকে করোনা ছাড়ানোর বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এ মার্কেটে নজর দেয়া এবং সবাই যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

এমএএস/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।