হাওরের কৃষক সময় মতো ধান ঘরে তুলতে পারবে, আশা কৃষিমন্ত্রীর
কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে হাওরের কৃষকেরা সময়মতো সুষ্ঠুভাবে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন এবং খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের হাওরে বোরো ধান কাটা পরিদর্শনের সময় কৃষিমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকের পাশাপাশি হাওর এলাকায় ধান কাটার জন্য ২৯৪টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ৪০৬টি রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে অতি সম্প্রতি ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে জরুরিভিত্তিতে পাঠানো নতুন ১২৮টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার এবং ২৩টি রিপার।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশে হাওরের কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সেজন্য যন্ত্রের দামের ৩০ শতাংশ দেয় কৃষক এবং ৭০ শতাংশ দেয় সরকার। এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় দুই লাখ ৬১ হাজার শ্রমিক ধান কাটার কাজে নিয়োজিত আছে। ফলে আশা করা যায়, আগাম বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হাওরের কৃষকেরা সময়মতো সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবে।’
ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জেলা/ উপজেলা/ ইউনিয়ন কৃষি বিভাগকে সম্পৃক্ত করে আমরা হাওরে আসার জন্য শ্রমিকদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি। গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রত্যয়নপত্র প্রদান, নিরাপদ যাতায়াতের জন্য গাড়ি, নির্বিঘ্ন গমনাগমন এবং ধান কাটার স্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকার ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হচ্ছে।’
সারাদেশে এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই কোটি চার লাখ ৩৬ হাজার টন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের যোগান দেয় হাওর অঞ্চলের বোরো ধান।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে হাওর অঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এ সাত জেলায় এ বছর শুধু হাওরে চার লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরের ৯৪ হাজার ৭৩৭ হেক্টর (২১.২৭ শতাংশ) জমির ধান কাটা হয়েছে। নেত্রকোনার হাওরে ৪০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে।
পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট চাষী ও শ্রমিক ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা জনগণ কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী কৃষকদের মাঝে সাবান, গামছা ও লুঙ্গি বিতরণ করেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনুরোধে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধান কাটতে এসেছেন। আমরা তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে এসেছি। সরকার সব সময় তাদের পাশে রয়েছে। কেউ অসুস্থ বা করোনায় আক্রান্ত হলে সরকার থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে।’
এ সময় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল ও মানু মজুমদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল মুঈদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এএইচ/এমকেএইচ