দুঃসময়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে ব্যারিস্টার সুমনের একটি দাবি
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গাড়ি মেইনটেনেন্স করার এক মাসের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে গরিব, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) নিজের ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি এ আহ্বান জানান।
সুমন বলেন, 'অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে একটি কথা বলতে চাই, বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারি থেকে শুরু করে লক্ষাধিক সরকারি কর্মকর্তা আছেন। যারা আপার মহলের কর্মকর্তা। যারা গাড়ি ব্যবহার করেন। যারা সরকার থেকে গাড়ি পান। আরও অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা আছেন। যারা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন।'
'আমি যে কারণে যে কথাটা মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বলতে চাই, প্রায় প্রতি মাসেই গাড়ি মেইনটেনেন্স করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাকে অর্থ দেয়া হয়। কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমি একটি চাকরি করতাম। সেখানে আমি দেখেছি, গাড়ি মেইনটেনেন্সের জন্য অর্থ দেয়া হয়।'
'করোনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) কিছু কর্মকর্তা বাদে আর যারা আছেন, এখন সবার গাড়ি পুরো মাস বসে আছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনি এই গাড়ি মেইনটেনেন্সের অর্থটা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেন। মাননীয় মন্ত্রী বসে থাকা মেইনটেনেন্সের টাকাগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্টে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দিয়ে দেয়া যায় না? মাননীয় অর্থমন্ত্রী, এখন সরকারি কর্মকর্তারা লকডাউনে রিক্স ফ্রিভাবে ঘরে বসে আছেন। তাদের কয়টা টাকা কম দিলে হয়তো ওনাদের কোনো সমস্যা হবে না।'
নিজের বাড়ির পাশে বন্যাদুর্গতদের জন্য তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্র দেখিয়ে ব্যারিস্টার সুমন অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের হাহাকারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তত তেলের ৫০ হাজার টাকাও যদি এই আশ্রয় কেন্দ্রে দান করেন, তাহলে এই মানুষগুলো পনেরো দিন থেকে দুই সপ্তাহ ভালোভাবে অন্তত খেয়ে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, এখন হচ্ছে সাশ্রয়ী হওয়ার সময়। মহামারির পরে যে অর্থনৈতিক স্ট্রাগল আমাদের করতে হবে তা আমরা জানি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সরকার ক্ষমতা থাকার পরেও যদি মানুষ না খেয়ে থাকে, তাহলে এটা হবে আমাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়।
সুমন বলেন, নিশ্চয়ই কোনো সরকারি কর্মকর্তা এই একমাস গাড়ি ব্যবহার করেননি। গাড়ি ব্যবহার করার কোনো সুযোগ তাদের নেই। নিশ্চয়ই কোনো সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের বাজারের জন্য যদি আপনি এই টাকা দেন, এটা অন্যায় হবে, অনেক বেশি অন্যায় হবে।
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু পাশের গ্রামেই করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে তাই বাঁচি কি মরি সেটা তো বলতে পারছি না। শেষ বারের মতো আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) একটি কথা স্মরণ করে দিতে যাচ্ছি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনিও কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। আপনি মানুষের যন্ত্রণা আরও নিবিড়ভাবে বোঝার কথা। আপনার একটি সার্কুলারে যদি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনেকগুলো টাকা জমা হয় এবং গরিব, অসহায় মানুষের কাজে যদি এই অর্থ ব্যয় হয় তাহলে এটাই হবে প্রকৃত রাজনীতি।'
'আমরা দেখেছি যে আপনি আপনার এলাকায় অনেক সেবা দিয়েছেন। আমরাও আমাদের এলাকা নিয়ে বিপদে পড়েছি। আপনি যেহেতু অর্থমন্ত্রী, সারাদেশের অর্থ নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হয়। আপনার একটি সার্কুলারে যদি বহু মানুষের ভাগ্য খুলে যায় এবং মানুষগুলো যদি ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যায়, তাহলে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত দুই জায়গাই শান্তির জায়গায় পরিণত হবে',- বলেন সুমন।
এফএইচ/জেডএ/পিআর