জীবিত নয় মৃত মানুষেরও হক নষ্ট করছে করোনা!
‘আহারে, দুই দুইটা লাশের দাফন হচ্ছে অথচ সবমিলিয়ে মানুষ হবে না ২০ জনও। করোনা খালি জীবিত মানুষই না মরা মানুষেরও হক নষ্ট করেছে। স্বাভাবিক সময়ে হলে কমপক্ষে শ খানেক লোকতো কবরস্থানে লাশ দুটি দাফন করতে আসতেন।’
আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন লোহার গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে এক পথচারী আরেকজনকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলো বলছিলেন। এ সময় ভেতরে দুটি কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে কবর দেয়ার অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন।
এর কিছুক্ষণ আগে লাশটি বহন করে আনার সময়ও খুব অল্পসংখ্যক মানুষকে দেখা যায়। স্বজনদের কেউ কেউ আবার বাঁশ ও চাটাই বহন করে আনছিলেন। মধ্য দুপুরে দাফন করা হলেও বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত গোটা কবরস্থানে এ সময় সুনসান নিরবতা। আজিমপুরের এ পুরাতন কবরস্থানের মতো এখন রাজধানীর প্রায় সব কবরস্থানেরই একই দৃশ্যপট।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারিভাবে কবরস্থানে প্রবেশ ও কবর জিয়ারতের ওপর সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে কবরস্থানগুলোতে লোকজন নেই বললেই চলে।
আগে লাশ দাফনের জন্য সিটি করপোরেশনের নিযুক্ত লোকজনের বাইরেও অনেকে লাশ দাফন, কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তথা দেখভালের জন্য কবরস্থানে দিনভর লোকজন থাকতো। করোনা সংক্রমণের ভীতি ও ইদানিং লাশ দাফনের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় কবরস্থানে আগের মতো লোকজন নেই।
বিভিন্ন কবরস্থানের লাশ দাফনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটি করপোরশনের কর্মকর্তারা বলেন, যে লাশগুলো দাফন করতে আনা হয় সেগুলোর সাথে আসা স্বজনের সংখ্যাও এখন অনেক কম। হাতেগোনা কিছু সংখ্যক স্বজন ছাড়া কেউ সাথে আসছে না। জানাজাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও কম থাকছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালবাগের এক ব্যবসায়ী বলেন, তার এক আত্মীয় মারা গেলেও তিনি জানাজা ও কবরস্থানে দাফন করতে যাননি।
তিনি জানান, যে এলাকায় তিনি মারা গেছেন ওই এলাকায় বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। জানাজা ও দাফন করতে গেলে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন, এ আশঙ্কায় যেতে পারেননি। এ কারণে তিনি ভীষণ মানসিক কষ্টে ভুগছেন বলে জানান।
এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ