রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলবে : র্যাব
রমজান এলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে- এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, রমজান এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। আশা করছি, এবার রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ লক্ষ্যে র্যাব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে, পাশাপাশি গোয়েন্দা অভিযানও অব্যাহত থাকবে।
নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ, চলমান করোনা পরিস্থিতি ও পবিত্র মাহে রমজানে র্যাবের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব সদর দফতর থেকে অনলাইনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নবনিযুক্ত মহাপরিচালক বলেন, রমজানে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ দেশব্যাপী চেকপোস্ট ও টহল জোরদার করা হয়েছে। ভার্চুয়াল জগতে মনিটরিংয়ে থাকবে সাইবার মনিটরিং সেল। সাদা পোশাকে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রমজানে তারাবি ও ঈদের নামাজের ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে র্যাবের নজরদারি থাকবে।
তিনি বলেন, করোনাকালে লকডাউনের সুযোগে চাল-পেঁয়াজসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে। র্যাব রাজধানীর বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি অভিযান পরিচালনা করে ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও এক কোটি ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেফতার ও কয়েকটি নিয়মিত মামলা করেছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে একযোগে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন বাস্তবায়ন নিশ্চিতে নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা, নিয়মিত টহল মাইকিং, চেকপোস্ট, নৌ টহল অব্যাহত রয়েছে।
প্রয়োজন ছাড়া মানুষ যেন বাইরে বের না হয় সে লক্ষ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে সারাদেশে ৩৫৮ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। যার মাধ্যমে দুই হাজার ২৪০ জনকে তিন কোটি ৪০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধ, নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লোভস, কিট তৈরি ও অবৈধ আমদানি ও বিক্রির বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিডফোর্ড, বনানী, বাবুবাজার, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ প্রতিষ্ঠানের ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৬২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে নিম্নমানের ও অব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লোভস ও ১২০০ কিট।
করোনা নিয়ে গুজব বিরোধী বেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে র্যাব। গুজব প্রতিরোধে র্যাবের ভার্চুয়াল পেট্রোলিং অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত গুজব রটনাকারী ৫০টি সাইট নজরদারিতে রয়েছে। গুজব ছড়ানোর দায়ে ১১ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই না বুঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য দেখলেই বা বিভিন্ন কনটেন্টে না বুঝে, সত্যতা যাচাই না করেই লাইক-শেয়ার ও কমেন্টস করছেন। পরবর্তিতে দেখা যায় ওইসব তথ্য বা কনটেন্ট ভুয়া।
তিনি সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো তথ্য-কমেন্টস শেয়ার বা লাইক দেবার আগে যাচাই করুন। কারণ অনেকেই কোনো ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে বা মিথ্যা প্রচারের জন্য গুজব ছড়ায়। না বুঝেও ওইসব কনটেন্টে কমেন্টস বা শেয়ার লাইক দেয়ার কারণে আইনের আওতায় আসার মতো পরিস্থিতিতে পড়েন। তাই অনুরোধ, না বুঝে কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবেন না। সত্য জানুন। প্রয়োজনে যে কোনো তথ্য যাচাইয়ে র্যাব সাইবার ভেরিফিকেশন সেন্টারের সহায়তা নেয়ার কথাও বলেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতিতে র্যাবের প্রত্যেক ব্যাটালিয়ন জনসাধারণের ব্যবহারে জীবাণুনাশক পয়েন্ট স্থাপন, ১২ হাজার পরিবারের মাঝে ৬৩ হাজার ৬২৬ কেজি চাল, ১২ হাজার ৫৭২ কেজি ডাল, ১২ হাজার ২৪৯ কেজি তেলসহ অন্যন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করেছে। সিরাজগঞ্জের দুগ্ধ খামারিদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার লিটার দুধ র্যাব সদস্যদের জন্য ক্রয় করা হয়েছে।
জেইউ/এএইচ/এমকেএইচ