করোনার কারণে ইফতার নিয়ে ভোগান্তি
সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানে অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা সব জায়গায় বসে ইফতার সামগ্রী বিক্রির ছোট-বড় দোকান। রাজধানীতে বসবাসরত বড় একটি জনগোষ্ঠী এসব দোকানের ইফতারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে প্রতিদিন দুপুর ২টার পর সব দোকান বন্ধ থাকে। ফলে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। বেশি বিপাকে ব্যাচেলররা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। বেশ কয়েক দফা বাড়িয়ে তা আগামী ৫ মে পর্যন্ত করা হয়। এই ছুটিতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলার নির্দেশনা রয়েছে প্রশাসনের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান মাসে মানুষ কেনাকাটা করে দুপুরের পর। ওই সময় দোকানপাট বন্ধ থাকলে একদিকে ক্রেতারা নিত্যপণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন না। সাধারণ মানুষ বেশি সমস্যায় পড়বেন ইফতার নিয়ে। কারণ, রাজধানীতে বসবাস করা মানুষের বড় একটি অংশ বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার কিনে খান।
রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই দুপুর থেকে বাসায় গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যায় আসে। আজ থেকে রোজা শুরু। ছেলে-মেয়ে সবাই রোজা। প্রতি বছরই রোজায় দোকানের ইফতারি আনি। কিন্তু এবার ২টার পর সব দোকান বন্ধ। কেনারও সুযোগ নেই। সন্ধ্যার পর গ্যাস এলে রান্না হবে। এখন বাসায় যা আছে তা দিয়েই কোনোমতে ইফতার করেছি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মতিঝিলের বাসিন্দা জয়নাল। একটি মেসে থাকেন। তিনি জানান, করোনার কারণে এক মাস ধরে বাসায় বুয়া নেই। নিজেরাই কোনোমতো রান্না করে খাই। আজকে রোজা রেখেছি। ইফতারি বানানোর মতো তেমন সুযোগ নেই। তাই সাধারণ কোনো খাবার দিয়ে ইফতার করতে হচ্ছে।
অপর এক ব্যাচেলর সওকত জানান, দোকান খোলা থাকলে কিছু কিনে এনে ইফতার করতাম। কিছু এখন কিছু করার নেই। গত রাতের রান্না করা খাবার ছিল, তা দিয়েই ইফতার করেছি।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড বলেন, এখানে গত বছর কত বাহারি ইফতারের দোকান বসেছিল। এবার পুরো ফাঁকা। সবকিছু বন্ধ। গতকাল ডিউটিতে আসার সময় খাবার নিয়ে এসেছিলাম। ওটা দিয়েই সেহরি করি। এখন কিছু নেই, বিস্কুট দিয়ে ইফতার করতে হচ্ছে। একটু ভুল হয়েছে, আগে বুঝতে পারিনি। আগামীকাল থেকে সকালেই কিছু কিনে রাখতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজধানীর ৫০ লাখ লোক বাইরে থেকে ইফতার কেনেন। চলমান সংকটে এত সংখ্যক লোক ইফতার কীভাবে করবেন। এসব বিষয়ে বিবেচনা করে মুদি ও খাদ্যপণ্যের দোকান হয় সারাদিন খোলা রাখা অথবা খোলা রাখার সময় বাড়ানো দরকার। এজন্য সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জরুরি।
এসআই/জেডএ/এমকেএইচ