‘চীন মুসলিম বিশ্বের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৭ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, চীন বরাবরই মুসলিম বিশ্বের পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে (করোনাভাইরাস) মহামারি মোকাবেলার জন্য চীন দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে।

রোববার (২৬ এপ্রিল) ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক বার্তায় রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।

লি জিমিং বলেন, রমজান ইসলামী জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। কেননা সারা পৃথিবীব্যাপী মুসলমানরা এই পবিত্রতম মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেদের শরীর, হৃদয় ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার প্রচেষ্টা করেন। আর এভাবেই রমজান ইসলাম বিশ্বাসীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণের মাস, যা তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিভাবে শান্তি, সহানুভূতি, ও সম্প্রীতির সাথে বছরের বাকি মাসগুলোতে জীবন যাপন করতে হয়।

‘সম্প্রীতির সাথে একত্রে বসবাস করা বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের অনুসারী ৫৬টি নৃগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত এক গর্বিত জাতির সদস্য হিসেবে চীনের বিশাল মুসলিম সম্প্রদায়ও রমজান পালন শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, এ বছর রমজান আমাদের কাছে এসেছে এক শতাব্দীর মধ্যে মানবজাতির জন্য অন্যতম কঠিন সময়ে। গত ডিসেম্বরে কোভিড-১৯ এর প্রথম সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত পৃথিবীব্যাপী ২৭ লাখ করোনা সংক্রমণ এবং এক লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৭ জন মানুষের এই সংক্রমণে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, এই মহামারি পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করছে। আর বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশগুলো এখনও এর প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতে চাই, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের চীনের প্রতি সেই সময়োপযোগী ও অমূল্য বস্তুগত এবং মানসিক সমর্থনের কথা, যখন এই মহামারি প্রথম আমাদের প্রিয় স্বদেশ চীনে আঘাত করেছিল। আর চীনের পক্ষ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির প্রারম্ভে আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান শুরু করি ৫০০ র্যাপিড টেস্ট কিটের প্রথম চালান প্রেরণের মাধ্যমে, চীনেরও ওই সময়ে যার ব্যাপক প্রয়োজন ছিল। তারপর থেকেই চীন বাংলাদেশের সাথে রাজনৈতিক দলের প্রতি রাজনৈতিক দলের, সরকারের প্রতি সরকারের, সমাজের প্রতি সমাজের এবং চিকিৎসাবিদদের প্রতি চিকিৎসাবিদদের সামগ্রিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিক মিথষ্ক্রিয়া জোরদার করেছে। চীন অদ্যাবধি টেস্টিং কিট, টিউব, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, থার্মোমিটার, গগলস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার সরঞ্জামসহ লক্ষ লক্ষ চিকিৎসা সামগ্রী ও উপকরণ প্রদান করেছে। চীনা কোম্পানিগুলো এবং জ্যাক মা ফাউন্ডেশন ও আলিবাবা ফাউন্ডেশনের মতো দাতব্য সংগঠনগুলোও বাংলাদেশকে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসা সামগ্রী ও উপকরণ দিয়েছে। রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের জন্য টন কা টন চালবাহী কার্গো চট্টগ্রাম পৌঁছেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংদেশে বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে সংশ্লিষ্ট চীনা কোম্পানি করোনা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সকল অসুবিধা ও হতাশা সত্ত্বেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পুরোপুরি চীনা অর্থায়নে গড়া চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রকে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য একটি অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে। অধিকন্তু, চিকিৎসক, নার্স এবং প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি চীনা চিকিৎসা দল ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্য বাংলাদেশে আসছে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ এবং কার্যকর সহযোগিতা সামগ্রিকভাবে চীন এবং ইসলামী বিশ্বের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের একটি প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সপ্তম শতাব্দীর প্রথমদিকেই যখন চীনে ইসলামের প্রথম প্রচলন হয়েছিল, তখনই বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যমে এই দুটি প্রাচীন সভ্যতার পারস্পরিক মেলবন্ধন শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম বিশ্বের সাথে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার এ ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয় এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং পরিবেশ সুরক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপ্তিলাভ করে।’

‘চীন বরাবরই মুসলিম বিশ্বের এক সময়-পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত বন্ধু, যে কিনা মুসলিম দেশগুলোর নিজেদের উন্নয়নের স্বাধীন পথ অনুসরণের পন্থাকে সমর্থন করে। আজ এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, মহামারি মোকাবেলার জন্য চীন দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। চীনা চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, পাকিস্তান এবং আফ্রিকার অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রেরণ করা হয়েছে।’

ভাইরাস কোনো সীমানা মানে না এবং মহামারি কোনো জাতি এবং ধর্মের মধ্যে পার্থক্য করে না উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বব্যাপী এই জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা মানবতার জন্য অংশীদারমূলক ভবিষ্যতের একক সম্প্রদায় গড়ে তোলার তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা বয়ে এনেছে। চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, কেবলমাত্র সংহতি ও সহযোগিতার দ্বারাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ মহামারির বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে এবং সকল মানুষরই এই সাধারণ ও একক বাসস্থান পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে। এটি মাথায় রেখে, আমি আপনাদের আবারো নিশ্চিত করছি যে, আরও ভাল ও অংশীদারমূলক ভবিষ্যতের জন্য এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের পাশে দাঁড়িয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবে।

জেপি/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।