‘পুলিশ কখনোই জনগণের পয়সায় কেনা ত্রাণকে নিজের নামে চালায় না’

সম্প্রতি করোনার সংকটকালীন সময়ে পুলিশের ত্রাণ বিতরণ নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। পুলিশের আ-দৌ ত্রাণ বিতরণের এখতিয়ার আছে কি-না, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাতে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. ইমরান আহম্মেদ। তার পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘করোনা সংকটে আজ সারাবিশ্ব ধুঁকছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব দেশের মানুষই ঘরবন্দি। বাংলাদেশেও চলছে সরকারি ছুটি। মানুষ কার্যত ঘরবন্দি। এতে সংকটে পড়েছেন দেশের নিম্নআয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা মানুষের অবস্থা আরও করুণ। এই সংকটময়কালে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকেই মানুষের সহযোগিতা এগিয়ে এসেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাই, এমন দুর্যোগের দিনেও নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অসহায় এসব মানুষের পাশে থাকছে বাংলাদেশ পুলিশ।’
‘বাংলাদেশ পুলিশের এমন মানবিক আচরণে দেশের মানুষ মুগ্ধ। এজন্য অনেকেই পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করছেন। করোনাকালে মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য একটি বিশেষ শ্রেণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশের মানবিক কার্যক্রমকে টার্গেট করে নানা ধরনের কটাক্ষ করছেন। দেশের এমন পরিস্থিতিতে এমন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
‘বিশেষ শ্রেণিটি করোনা সন্দেহে কারও মৃত্যু হলে কেউ এগিয়ে না এলেও পুলিশ লাশ দাফন করে, তখন এরা প্রশ্ন তোলে না। যখন অসুস্থ ব্যক্তি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকলেও করোনা সন্দেহে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে না এলেও পুলিশ যখন হাসপাতালে নেয়, তখনও এরা তখন প্রশ্ন তোলে না। চিকিৎসক ও নার্সদের যখন পুলিশ হাসপাতালে দিয়ে আসে তখনো এরা প্রশ্ন তোলে না। কিন্তু পুলিশ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালালেই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। নানা অবান্তর বিষয় হাজির করে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কটাক্ষ করা শুরু করে।’
‘দেশের সংবিধান অনুসারে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। মুশকিলটা হলো কিছু কর্মচারী নিজেকেই মালিক মনে করেন। ভাবখানা এমন তিনি সম্রাট আর বাকিরা সব তার প্রজা। ভুলে যান তিনিও একজন বেতনভুক্ত ভৃত্য। এর চেয়ে বড় কিছু নন। এ কারণেই ঘুরে ফিরে কেবল পুলিশের পেছনে পড়ে থাকেন। বিশেষ শ্রেণি মনে করে, ত্রাণ বিতরণে তারাই মালিক। যদি নিজের টাকায় কেউ ত্রাণ দেয় তাহলে অন্য কী করে অন্য কেউ ত্রাণের মালিক হন?’
‘জাতির এই সংকটময়কালে পুলিশ প্রকাশ্যে ও গোপনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পুলিশে আসলে কাউকে ত্রাণ দিতে চায়নি বরং চেয়েছে বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। তাই এটাকে ত্রাণ না বলে বরং পুলিশ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বলতে বেশি ইচ্ছুক। পুলিশের এই সহায়তা সামগ্রী যোগানের বড় অংশই হলো নিজেদের বেতনের টাকা আর রেশন। এর বাইরে অনেক ক্ষেত্রে সমাজের অনেক বিত্তশীল ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান সাহায্য করতে চেয়ে পুলিশের মানবিক কার্যক্রমে শরীক হতে চান। যেমন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন পুলিশের সহায়তায় খাবার বিতরণ করেছে। আবার যেমন মিরপুরের আট বছরের ছোট্ট শিশু আয়ান পুলিশের কাছে নিজের টাকা জমানো ইলেকট্রিক ভল্ট এনে দিয়ে বলেছে। তার টাকা দিয়ে যেন অভুক্ত মানুষকে সহায়তা করা হয়। এজন্য সে পুলিশের সাহায্য চায়।’
‘ছোট্ট আয়ানের আবদার মেনে তার টাকা দিয়ে খাদ্য কিনে অসহায় মানুষের মধ্যে তার নামেই বিতরণ করেছে পুলিশ। এখানে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, প্রথমত-পুলিশ নিজের থেকে যেচে কারও থেকে সাহায্য নিতে যায় না। দ্বিতীয়ত-যদি অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি পুলিশকে সহযোগিতা করে সেটিকে ভালোভাবেই জানিয়ে দেয় পুলিশ। যেমন চট্টগ্রামে পুলিশের সহায়তায় বিএসআরএম গ্রুপ পত্রিকার হকারদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে, কেউ যদি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান, সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। মনে রাখবেন, বাংলাদেশ পুলিশ কখনোই জনগণের পয়সায় কেনা ত্রাণকে নিজের নামে চালায় না।’
‘এখন প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে ওই বিশেষ শ্রেণি কেন পুলিশের পেছনে লেগেছে। এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, পুলিশ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি সারাদেশেই ত্রাণ চোরদের ধরছে। চোরদেরও নাকি একটা নেটওয়ার্ক থাকে। সেই নেটওয়ার্কে নামে-বেনামে অনেকে যুক্ত থাকেন। চুরির একটা অংশ সেই নেটওয়ার্কে যুক্ত প্রত্যেকের ভাগেই পড়ে। কিন্তু পুলিশের অভিযানের কারণে স্বার্থে আঘাত লেগেছে। পুলিশ যদি ত্রাণ চোরদের না ধরতো, তাহলে হয়তো কিছু না কিছু তো পাতে পড়তো। কিন্তু দেশব্যাপী পুলিশের অভিযানে সেই আশায় যে গুড়েবালি!’
‘আরেকটা কারণে এটা করতে পারে। যখন মানুষ নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ হয় তখন নাকি অপরের কাজের দোষ খুঁজে বেড়ায়। এটাও একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।’
‘শেষত, আরেকটি বড় কারণ পরশ্রীকাতরতা। বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের সেবক হিসেবে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এতে মানুষ এটা বুঝতে পারছে, আসলে কারা কাজ করে আর কারা কাজ না করেই ক্রেডিট নেয়। যেহেতু জনগণের সামনে এটা ক্রমান্বয়ে সুস্পষ্ট হচ্ছে, তাই তাদের মনে ভয় ধরেছে। এজন্যই বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’-এ স্লোগান ধারণ করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাই যতই ষড়যন্ত্র করো, জাতির পিতার ভাষাতেই বলবো, দাবাইয়া রাখতে পারবা না।
এআর/এসআর/জেআইএম