চট্টগ্রামে নতুন আক্রান্তের তালিকায় র্যাব, পুলিশ ও চিকিৎসক
চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের তালিকায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। সোমবার (২৭ এপ্রিল) শনাক্ত ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সদস্য। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকেরও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
সোমবার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১০০টি নমুনার পরীক্ষায় ১২ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯, দুইজন পুরোনো রোগী। মহানগরীর বাসিন্দা ৬ জন, সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী ও মিরসরাই উপজেলায় একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পুরোনো রোগী দুজনই সাতকানিয়ার বাসিন্দা।
এসব বিষয় জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির। তিনি জানান, করোনায় আক্রান্তদের একজন র্যাব সদস্য। তিনি পতেঙ্গা র্যাব কার্যালয়ে আইসোলশনে আছেন। এছাড়াও নগর পুলিশের আরেক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি দামপাড়া পুলিশলাইন্সের সদস্য।
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার ওই চিকিৎসক হাসপাতালের ১৩ ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। একইসঙ্গে নগরের মা ও শিশু হাসপাতালে কর্মরত ৬৫ বছর বয়সী এক নারী কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, এর আগে দুই উপজেলায় দুই চিকিৎসক ও দামপাড়া পুলিশলাইন্সের পাঁচ সদস্য করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন।
এর বাইরে রয়েছেন নগরের পাহাড়তলী এলাকার একজন পুরুষ (৭০), দক্ষিণ হালিশহর এলাকার একজন পুরুষ (৪৮), বোয়ালখালী উপজেলার একজন পুরুষ (৪৮), মিরসরাই উপজেলার একজন পুরুষ (২৩), সীতাকুণ্ডের পোর্ট লিঙ্ক রোড এলাকার একজন পুরুষ (৪৮)। এছাড়া লক্ষ্মীপুর সদরের ৪৬ বয়সী একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে র্যাব-৭ এর এএসপি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের একজন সদস্যের শুকনা কাশি ও গলাব্যথা থাকায় গত ২১ এপ্রিল স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সোমবার তার ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়। গত ১৪ দিন ধরে তাকে কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছিল। এখন থেকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রাখা হবে। তার সাথে যারা কাছাকাছি ছিল তাদের সকলের করোনা টেস্ট করানো হবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী জাগো নিউজকে বলেন, নতুন আক্রান্তদের চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা হবে। একইসাথে তাদের বসবাসরত এলাকাটি লকডাউন করা হবে।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী, গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। নগরীর দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি তার ওমরাহফেরত মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় করোনারোগী শনাক্ত হন ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে।
৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হন তিনজন। একদিন বিরতি দিয়ে ১০ এপ্রিল বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় আরও দুইজন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ১১ এপ্রিল শনাক্ত হন তিনজন। ১২ এপ্রিল সে সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে উন্নীত হয়। আক্রান্তদের এক শিশু ওইদিন দিবাগত রাতে জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। এছাড়া ওইদিন ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যও করোনা আক্রান্ত হন।
১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া দুই করোনারোগীর একজন (নারী) করোনা শনাক্তের আগেই আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মারা যান। ১৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে এক চিকিৎসক, সাতকানিয়ার পাঁচ যুবক ও নগরের সাগরিকা এলাকার এক পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত হন। এর পরের চারদিন ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয় যথাক্রমে ৫, ১,১ ও ১ জনে।
তবে ১৯ এপ্রিল হঠাৎ আবারও বাড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এদিন চারজনের শরীরে ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এছাড়াও পুরোনো এক রোগীর আবারও পজিটিভ আসে। ২১ এপ্রিল নতুন একজন করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে।
২২ এপ্রিল নতুন তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়। ২৪ এপ্রিল নগরের দামপাড়ায় আরও একজন রোগী শনাক্ত হয়। গত ২৫ এপ্রিল আরও দুই রোগী শনাক্ত হয়। রোববার (২৬ এপ্রিল) শনাক্ত হয় ৭ জন। সর্বশেষ সোমবার একলাফে ৯ রোগী শনাক্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা হয় ৬৪ জন। এদের মধ্যে ঢাকা ও রাজবাড়ীতে শনাক্ত হওয়া দুই ব্যক্তি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে এক শিশু, দুই বৃদ্ধ ও দুই নারীসহ মোট পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আইশোলসনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচজন। মৃত্যুর পর তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ১২ করোনা জয়ী। ২৮ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন।
আবু আজাদ/বিএ/জেআইএম