রোজায় কমেছে নিত্যপণ্যের দাম
রোজা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে করোনাভাইরাসের প্রভাবও ছিল বটে। তবে কয়েক রোজা যেতেই চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভন্ন নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রোজার এক সপ্তাহে মাত্র দু’টি পণ্যের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮টি পণ্যের।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ বাজার, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যাম বাজার, কচুক্ষেত বাজার, মৌলভীবাজার, মহাখালী বাজার, উত্তরা আজমপুর বাজার, রহমতগঞ্জ বাজার, রামপুরা এবং মিরপুর-১ নম্বর বাজারের পণ্যের দামের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
দাম কমা পণ্যগুলোর সবকটিই রোজায় অন্য সময়ের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসুর ডাল, লুজ সয়াবিন তেল, খেজুর, ছোলা, পাম অয়েল এবং চাল।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ভোক্তারা রোজা শুরু হওয়ার এক-দুই সপ্তাহ আগে থেকেই রোজার পণ্য কেনা শুরু করেন। বেশিরভাগ ক্রেতা রোজার এক মাসের পণ্য একবারে কিনে নেন। এ কারণে রোজার শুরুতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায়। কিন্তু রোজা মধ্যে সবকটি পণ্যের চাহিদা কমেছে। ফলে একদিকে বিক্রি কমেছে, অন্যদিকে দামও কমেছে।
টিসিবির হিসাবে রোজার মধ্যে সব থেকে বেশি দাম কমেছে আদার। রোজার মধ্যে দেশি আদার দাম ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং আমদানি করা আদার দাম ৪১ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে। ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা আদার দাম কমে ১৮০-২০০ টাকায় নেমেছে। আর ২৫০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি আদার দাম কমে হয়েছে ১৫০-২০০ টাকা।
রোজায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুরের দাম রোজায় ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে বলে টিসিবির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সাধারণ মানের খেজুরের দাম কমে ২২০-৩০০ টাকা হয়েছে।
রসুনের দাম গত এক সপ্তাহে কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ১৫০-১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের কেজি কমে ১৪০-১৬০ টাকা হয়েছে। বড় দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯৫ টাকা, যা রোজার আগে ছিল ৯০-১০০ টাকা। ৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লুজ সয়াবিন তেলের কেজি কমে ৯২-৯৩ টাকা হয়েছে।
রোজায় অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে পরিচিত আরেক পণ্য ছোলার দাম রোজার মধ্যে কমেছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ৭৫-৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোলার দাম কমে ৭৫-৮০ টাকায় নেমেছে। পাম অয়েলের (সুপার) ৮০-৮৫ টাকা থেকে ৮০-৮৩ টাকা হয়েছে। সরু চালের দাম ৬০-৬৮ টাকা থেকে কমে ৫৮-৬৫ টাকা হয়েছে। আর মাঝারি মানের চালের কেজি ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা।
রোজার মধ্যে নতুন দাম বেড়েছে ছোট দানার মসুর ডাল ও এলাচের। এর মধ্যে ছোট দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পণ্যটির দাম বেড়ে এখন হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা। আর ছোট এলাচের দাম ৪০০০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২০০ টাকা।
দামের পার্থক্য থাকলেও টিসিবির প্রতিবেদনে যেসব পণ্যের দাম কমার তথ্য উঠে এসেছে, রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরাও সেসব পণ্যের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন।
চালের দাম কমার কারণ হিসেবে খিলগাঁওয় তালতলার চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন বিক্রি তেমন নেই। এ কারণে আমরাই কম দামে চাল বিক্রি করে দিচ্ছি। তবে কিছুদিন পর নতুন চাল আসবে। তখন পাইকারিতে চালের দাম কমবে বলে আমরা আশা করছি। এ কারণে বেশি দামে কেনার পরও এখন দাম কমিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছি।’
পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম কমার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রোজার আগে ভালো বিক্রি হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে বিক্রি নেই। কোনো মালই তেমন চলছে না। পেঁয়াজ, আদা, রসুন সবকিছুর দাম কমেছে তারপরও বিক্রি তেমন নেই। আমাদের মনে হচ্ছে, কিছুদিন পর বিক্রি বাড়লে আবার এসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।’
ছোলা, ডাল, তেলের দাম কমার বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী শিপলু বলেন, ‘রোজায় যেসব পণ্য লাগবে তা ক্রেতারা আগেই কিনে ফেলেছেন। তাছাড়া হোটেলের ব্যবসাও বন্ধ রয়েছে। ফলে এখন তেল, ডাল, ছোলার চাহিদা বেশ কম। এ কারণেই হয়তো পাইকারিতে দাম কমছে। আর পাইকারিতে দাম কমার কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি।’
এমএএস/এফআর/পিআর