এক মাস আগের ও পরের চিত্রে এত তফাত!
গত এক মাস আগে এই দিনে (৪ এপ্রিল) সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬১ জন। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আজ (৪ মে) এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৪৩ জনে। শুধু তা-ই নয়, করোনা-সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা ও পরীক্ষার সংখ্যা, একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা এবং সারাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক অর্থাৎ ৩৩টি আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার রেকর্ডসহ নতুন নতুন সব রেকর্ড হয়েছে আজ।
সোমবার (৪ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ছয় হাজার ৩১৫টি নমুনা সংগ্রহ এবং ছয় হাজার ২৬০টি নমুনার পরীক্ষা হয়, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে ৬৮৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, এটিও নতুন রেকর্ড।
গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮২ জনে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। আজ (৪ মে) পর্যন্ত সারাদেশে সর্বমোট ৮৭ হাজার ৬৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ৫৭তম দিনে এসে ১০ হাজারেরও বেশি রোগী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হন। একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা সংগ্রহ ও শনাক্ত এবং সর্বাধিক ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার রেকর্ডও স্থাপিত হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এক মাস আগের ও পরের করোনা পরিস্থিতির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে রাত-দিন তফাত পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুরুর দিকে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৮-১০ জন আক্রান্ত হতেন। মৃতের সংখ্যা ছিল সীমিত। সেসময় শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরে এ নমুনা পরীক্ষা হতো। কিন্তু দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে রাজধানীসহ সারাদেশে নতুন নতুন নমুনা পরীক্ষার কেন্দ্র খোলা হয়। এর সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩টিতে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা, অত্যাবশ্যক না হলে ঘরের বাইরে না যাওয়া, বের হলে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস শুরুতে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে শুধুমাত্র রাঙ্গামাটি ছাড়া বাকি সব জেলায় এর সংক্রমণ ঘটেছে।
দেশে মোট আক্রান্তের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর অবস্থান রাজধানী ঢাকা ও ঢাকা বিভাগে। ঢাকা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জসহ বেশকিছু জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেশ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় সরকারি ছুটি বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (৪ মে) নতুন করে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সীমিতপর্যায়ে দোকানপাট ও শপিংমল খোলারও ঘোষণা এসেছে আজ। এছাড়া দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঈদের ছুটিতে দূরপাল্লার বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত ও এসেছে আজ।
একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া, অপরদিকে সীমিতপর্যায়ে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়ার ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আক্রান্ত-মৃতের ভয় আরও বেশি জেঁকে বসেছে। কারণ রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি মাসেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ হতে পারে। মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
এমইউ/এমএআর/এমএস