উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াবে
বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে।
মঙ্গলবার (৫ মে) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা করা হয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণা করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এই গবেষণা করেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, চলমান বায়ুদূষণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতায় ভুগছেন বা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে আক্রান্ত এই রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকিকে করোনা মহামারি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিআরইএ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গবেষণা প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভিরতা বলেন, বিশ্বের বেশ কয়েকটি গবেষণায় বায়ুদূষণ ও উচ্চ রক্তচাপ বা ফুসফুসে প্রদাহের মতো দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগের সম্পর্ক মিলেছে। একই সঙ্গে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ক্রনিক রোগে আক্রান্তরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজে সুস্থ হচ্ছেন না বা তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলছে এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকে চরম চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
‘বায়ুর মান, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বাংলাদেশের পায়রায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি পায়রায় প্রস্তাবিত ৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবকটি নির্মাণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ আরও বাড়বে। খুব ছোট একটি এলাকার মধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও খুব দুর্বল। শেষ পর্যন্ত যদি সবকটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখানে নির্মিত হয়, তাহলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। ভবিষ্যতে এই বিদ্যুৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে এবং করোনাভাইরাসের মতো আরেকটি মহামারি এলে অসংখ্য মৃত্যুর কারণ হবে।
গবেষণা অনুসারে, পায়রায় নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ৩০ বছরের মেয়াদকালের দূষণের কারণে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, ১১ হাজার ইসকেমিক হৃদরোগ, প্রায় ৩ হাজার ফুসফুসের প্রদাহ, প্রায় ২ হাজার ফুসফুসের ক্যানসার, প্রায় ৯ হাজার স্ট্রোক এবং প্রায় আড়াই হাজার জনের মৃত্যু হতে পারে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে।
এছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ৭১ হাজার বার হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা, শ্বাসকষ্টের নতুন ১৫ হাজার অসুস্থ শিশু, নির্ধারিত সময়ের আগে ৩৯ হাজার শিশুর জন্ম, ২ কোটি ৬০ লাখ অসুস্থতা জনিত ছুটি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য অক্ষম হয়ে প্রায় ৫৭ হাজার বছরের সমান সময় বেঁচে থাকা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি করোনায় আক্রান্ত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য বাংলাদেশের পটুয়াখালীর পায়রায় সব কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, পায়রার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা শুরুর সময়েই এই সম্ভাব্য দূষণের মাত্রা নিয়ে আলোচনা দরকার ছিল।
উল্লেখ্য, বায়ুদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে এ দেশের গড় আয়ু প্রায় দুই বছর কমেছে। দূষিত রাজধানীগুলোর মধ্যে ঢাকা শীর্ষে। এখানে বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে আট গুণ বেশি।
এফএইচ/এমএসএইচ/এমকেএইচ