শুনি কোটি টাকার ত্রাণ দেয়, কই আমি তো ১০ টাকা পাইলাম না
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ কলা বিক্রেতা আব্দুল আউয়াল মিয়া। আজিমপুরের পুরাতন কবরস্থানের উত্তর গেটের অদূরে প্রতিদিন কলা বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় ঝিম মেরে বসে থাকেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সারাদিনে গুটিকয়েক ক্রেতার দেখা পান। সরকারের নির্দেশনা মেনে নগরবাসীর অনেকেই ঘরে বসে থাকলেও বৃদ্ধ আউয়াল মিয়া পেটের তাগিদে প্রতিদিন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
এ প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাপকালে এই বৃদ্ধ হতাশার সুরে বলেন, 'বেচাকেনা কইমা গেছে। কাস্টমার নাই। বড়লোকরা কিনতে না আসলে বেচুম কার কাছে।'
করোনার বিষয়ে একটি প্রশ্ন করলে আউয়াল মিয়া বলেন, 'আমার জান ভালো, দুনিয়া ভালো। করোনা বুঝি না। আমি হাঁটতে পারি, চলতে পারি, খাইতে পারি।'
এ কথা বলার পরপরই তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'আমাগ দেয়, এই যে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ দেয় শুনি। দিছে আমাগো সরকারিভাবে ১০ টাকা কেউ? কেন আমরা পাই না? আমার ছেলে নাই, কাম কইরা খাইতে হয়। আমাগো দিব না কেন? সরকার তাইলে কাগরে (কাদের) দেয়।'
বৃদ্ধ আউয়াল মিয়া কথা প্রসঙ্গে জানালেন, কলা বিক্রি করে তিনি দুই মেয়েকে অনার্স পাস করিয়েছেন। মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের জামাই তেজগাঁওয়ে একটি অফিসের হিসাবরক্ষক।
তিনি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ তার রাস্তায় বসে কলা বিক্রি করার কথা না। নিউ সুপার মার্কেটে তিনি লটারিতে দোকান পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী কিছু লোকজন ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তার নামে বরাদ্দ দোকান হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি জানান, তার কাছে কাগজপত্র সবই আছে। যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি তার ওই দোকান উদ্ধারে সহায়তা করতেন তাহলে তিনি চির কৃতজ্ঞ থাকতেন। তবে না পেলেও তার আফসোস নেই। কারণ কষ্ট০সংগ্রাম করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। হয়তো আর যে কটা দিন বেঁচে থাকবেন কষ্ট করে বাঁচবেন। তবে বরাদ্দ দোকান না পাওয়ার বেদনা তাকে প্রতিদিনই আহত করে।
এমইউ/জেডএ/জেআইএম