যাত্রী সংকটে রোজগারে ভাটা, নিদারুণ কষ্টে রিকশাচালকরা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ১২ মে ২০২০

রাস্তার আইল্যান্ডের পাশে রিকশাটি রেখে হাত-পা ছড়িয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লেন মধ্যবয়সী এক রিকশাচালক। ঘন ঘন দম ছাড়ছিলেন। ঘাড়ের গামছা নিয়ে হাত-মুখ থেকে ঘাম মুছতে থাকলেন। মাথার ওপর প্রখর রোদের তাপে সেই চেষ্টা যেন বিফল হচ্ছিল। অদূরেই আরেক বৃদ্ধ রিকশাচালক আইল্যান্ডের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

মঙ্গলবার (১২ মে) দুপুর ২টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ের সামনে এ প্রতিবেদকের চোখে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে।

yacen3

কাছে এগিয়ে আলাপ করতেই মধ্যবয়সী রিকশাচালক জানান, তার নাম ইয়াসিন আলী। সকাল থেকে রিকশা নিয়ে যাত্রীর খোঁজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। কিন্তু যাত্রী পাচ্ছেন না। দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা আয় করেছেন। এই রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে রিকশা চালিয়ে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তাই বিশ্রাম নিতে এখানে ফাঁকা রাস্তায় বসে পড়েছেন।

ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা ইয়াসিন আলী স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে জীবিকার সন্ধানে ঢাকা শহরে আসেন। রিকশা চালিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতিতে প্রায় সব অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে গেলে তাদের জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটে। জমানো কিছু টাকা ছিল, গত দুই মাস বাসায় বসে সেগুলো ভেঙে খেয়েছেন। হাত খালি হওয়ায় কয়েক দিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা চালাতে রাস্তায় বের হচ্ছেন। কিন্তু আগের মত রাস্তায় মানুষ চলাচল নেই বলে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন ইয়াসিন।

yacen3

জাগো নিউজকে ইয়াসিন আলী বলেন, মাসিক চার হাজার ৫০০ টাকা ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু আয়-রোজগার না থাকায় তিন বেলার আহার জোটাতেও পারছি না। এখন ভাড়া কীভাবে দেব? এই অবস্থা চলতে থাকলে ভাতে মরা ছাড়া উপায় নেই।

তার কথার সঙ্গে সায় দেন অদূরেই বিশ্রামরত ৭০ বছর বয়সী রিকশাচালক ফরাজী মিয়া। তিনি জানান, বহু বছর ধরে রিকশা চালিয়ে পাঁচ সন্তানকে বড় করেছেন, বিয়ে শাদি দিয়েছেন। কিন্তু কখনো অভাবে পড়েননি। করোনাভাইরাসের কারণে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে অর্থকষ্টে ভুগছেন তাদের মতো শত শত রিকশাচালক।

yacen3

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মঙ্গলবারের সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ২৫০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই মারা গেছেন ১১ জন। যদিও সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ১৪৭ জন।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে ছুটি। বন্ধ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। যদিও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ১০ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে দোকানপাট ও শপিংমলও।

এমইউ/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।