সীমিত ঈদ বাজারেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, দোকানে তালা
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ মে থেকে মার্কেট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামের সব বড় বিপণি-বিতান ও শপিংমলের ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বন্দরনগরের ব্যক্তিগত দোকান-আউটলেটসহ উপজেলা পর্যায়ের দোকানগুলো খোলা থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই।
বিক্ষিপ্তভাবে খোলা মার্কেট এবং দোকানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন। তাই দোকান খোলার তৃতীয় দিনেই অনেক মালিককে দোকান বন্ধ করতে হয়েছে। অভিযানে অনেকে পালিয়েছেন দোকান ফেলেই।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ১০ মে থেকে মার্কেট শপিংমলে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকানিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে।
কিন্তু চট্টগ্রামের বিক্ষিপ্তভাবে খোলা মার্কেটের দোকানে প্রথম দিন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি ব্যত্যয় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলার বেশিরভাগ মার্কেটে মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়ম কানুন।
এদিকে দোকান খোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
বুধবার (১৩ মে) দুপুরে নগরের নন্দনকান, রাইফেল ক্লাব এবং মোসাফির খানা মার্কেটের অভিযান চালিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় শতাধিক দোকানে তালা দিয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা অভিযানে নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এতদিন কঠোর হইনি, আজ থেকে হলাম। মার্কেট কিংবা দোকান খুলতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা আবশ্যক। এর বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেয়া হবে না। আজ থেকে তা তদারকিতে মাঠে নেমেছি আমরা ‘
এদিকে জেলার বোয়ালখালী, পটিয়া, রাউজান ও হাটহাজারীসহ প্রায় সব উপজেলা থেকে স্থানীয় মার্কেট ও দোকানে বেচাকেনার ধুম লেগেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ক্রেতারা অনেকেই মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা ও কেনাকাটা করছেন। ওই মার্কেটের অনেক দোকানি ও কর্মচারীও মাস্ক না পরেই কাপড় বিক্রি করছেন।
এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনেকটা গাদাগাদি করেই বেচাকেনা করা হচ্ছে। বড় বড় শপিংমলে তো বটেই ছোট মার্কেটেও দেখা গেছে একই পরিস্থিতি। সুরক্ষার কথা ভুলে গিয়ে একে অপরের গা-ঘেঁষে কেনাকাটায় মগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। যেন ঈদ উৎসবের আনন্দে ভুলে গেছেন লকডাউনের কথা।
বোয়ালখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন কি না তা দেখতে বুধবার দুপুরে অভিযান চালানো হয়। শাকপুরা চৌমুহনী বাজার ও ফুলতল বাজারের কাপড়ের দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছিল না। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখেই দোকান খোলা রেখে পালিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা দোকান ফেলে গা ঢাকা দেন।’
হাটহাজারীতে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা
চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হাটহাজারী। তাই এ উপজেলার মার্কেটগুলোতে সবসময় পুরুষের চাইতে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সবচেয়ে অমনোযোগী এসব নারী ক্রেতারা।
এ সুযোগকে পুঁজি করে কিছু কিছু দোকাদারেরা প্রশাসনের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছে।
প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করলেই কিছুক্ষণের জন্য নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করলেও পরক্ষণেই তা আর থাকছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালে অভিযান শুরুর আগে একদফা, অভিযান শেষ হলে আরেকদফা বাজারগুলোতে যাচ্ছেতাই অবস্থা। শপিংমল বন্ধ থাকলেও দোকানে অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অনেক সময় সামনের শাটার ফেলে ভেতরে গাদাগাদি করে চলছে কেনাবেচা। এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগেই সবার ঘরে ঘরে করোনা পৌঁছে যাবে।’
আবু আজাদ/এএইচ/এমএস