সাহায্যের আশায় বেরিয়ে আহত ছেলেকে নিয়ে ঘরে ফিরলেন মা
রাজধানীর ধানমন্ডির রাইফেল স্কয়ারের সামনে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে যায় এক শিশু। এরপর ছোটাছুটি, পথচারীদের দৌড়ঝাঁপ। পথচারীরা তুলে আইল্যান্ডের ওপর বসাতেই ছুটে এসে ছেলেটিকে কোলে তুলে নিয়ে বসে কান্না জুড়ে দেন এক নারী ও তার সঙ্গে থাকা দুই মেয়েশিশু।
ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সাহায্যের আশায় ঘর থেকে বাইর হইলাম, সাহায্য তো পাইলাম না, ছেলেটার অ্যাক্সিডেন্টে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। হাতের চামড়া উঠে গেছে, ভাঙছে কি-না কে জানে।’
এ সময় পথচারীদের অনেকেই ওই নারী সান্ত্বনা দিয়ে কিছু অর্থ সাহায্য করে ইবনে সিনা হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। বুধবার বিকেলের ঘটনা এটি।
মোহাম্মদপুরের পাঠশালা গলির বাসিন্দা ওই নারী জানান, কয়েক বছর আগে তার স্বামী মারা যান। দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন। পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে রাজধানীর নিউমার্কেটে একটি চায়ের দোকান দেন। স্বামীর মৃত্যুর পর চা বিক্রি করে বাড়িভাড়া ও সংসারের খরচ এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মার্কেট বন্ধ থাকায় সংসারের চাকা অচল হতে বসেছে।
তিনি জানান, মাসিক ৭ হাজার ৮০০ টাকা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। করোনার কারণে রোজগার না থাকায় দুই মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে। বাড়িওয়ালা ডেকে বলে দিয়েছে ভাড়া পরিশোধ না করলে সামনের মাসে বাড়ি ছাড়তে হবে।
ওই নারী বলেন, জমানো কিছু টাকা দিয়ে এতদিন খাবারের খরচ চললেও টাকা ফুরিয়ে আসায় এবং বাড়িওয়ালার প্রতিদিন ভাড়ার তাগাদা দেয়ায় আজ তিনি নূর হোসেন মার্কেটে পরিচিত কিছু ব্যবসায়ীর কাছে সাহায্যের আশায় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে মার্কেট বন্ধ দেখতে পান। বাসায় ফেরার পথে তিনি আনমনে একাকী হাঁটছিলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও হেঁটে আসছিল। হঠাৎ করে রাস্তা পারাপারের সময় একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেল এসে ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। পথচারীরা ছুটে এসে শিশুটিকে পানি খাওয়াতে চাইলে শিশুটির মা জানান, তারা সবাই রোজা রেখেছেন। এ সময় পথচারীরা কিছু টাকা হাতে তুলে দিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, মার্কেট খোলা থাকলে তাকে হাত পাততে হতো না। এখন বাড়িভাড়া পরিশোধ করাটাই তার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আপাতত তিনটি সন্তান নিয়ে বাসায় যেন থাকতে পারেন সেজন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চান।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস