রাতের নগরীতে ভেসে আসে অভুক্ত মানুষের আহাজারি
রাত ৯টা। চারদিকে সুনসান নীরবতা। মাঝে মাঝে রাতের নীরবতা ভেঙে সজোরে হর্ণ বাজিয়ে ছুটে চলছে মালবাহী লরি ও ট্রাক। রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা না থাকলেও যাত্রীর আশায় তখনো রাস্তায় রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ছুটতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে দেখা যায়, দুজন নারী-পুরুষ ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে সাহায্যের আশায় হাত পেতে থাকা এক ব্যক্তিকে কিছু টাকা দান করলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে ছুটে এসে তাদেরকে ঘিরে ঘরে আরও কয়েকজন বলতে থাকে, ‘স্যার, আমাগোরেও কিছু সাহায্য করেন।’
তাদের কেউ বলছিলেন, বড় কষ্টে আছি। কেউ বলছিলেন, তিন দিন অভুক্ত। কেউ আবার সেহরিতে কিছু কিনে খাবেন বলে সাহায্য চাইতে থাকলেন। এ সময় কিছু নগদ টাকা সাহায্য দিয়ে কোনো রকমে স্থান ত্যাগ করলেন তারা দুজন।
বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে রাতের রাজধানীর শুধু সায়েন্স ল্যাবরেটরি নয়, বিভিন্ন স্থানে ভাসমান অসহায় দরিদ্র মানুষের আহাজারি শোনা যায়। সাহায্যের আশায় তারা রাত জেগে অপেক্ষা করেন।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ পরিস্থিতিতে রাতে রাস্তা-ঘাটে মানুষের সংখ্যা থাকে খুবই কম। অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো একটু সাহায্যের আশায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় থাকে।
গতকাল সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ক্র্যাচ হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪০-৪২ বছর বয়সী এক নারী। মরিয়ম বেগম নামের ওই নারী জানান, সাভারের রানা প্লাজায় তিনি ছয় তলার একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে ১৮ দিন পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। একই গার্মেন্টসে তার স্বামী ও সন্তান চাকরি করতেন। তিনি প্রাণে বাঁচলেও স্বামী ও সন্তান ভেঙে পড়া ভবনের নিচে পড়ে মারা যান। স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার পর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আহতদের তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তিনি কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পাননি। ঘরে বৃদ্ধ মা ও নিজের জীবন বাঁচাতে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লোকজন ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। ফলে জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা সালাম নামের এক যুবক জানান, এলিফ্যান্ট রোডের একটি জুতোর দোকানে সামান্য বেতনে চাকরি করতেন। তিনি ও তার রিকশাচালক বাবার সামান্য বেতনের টাকায় বাবা-মা-ভাই-বোনসহ ৫ সদস্যের পরিবারটি চলতো। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দোকান বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার বন্ধ। তাই সাহায্যের আশায় পথে নেমেছেন বলে জানান তিনি।
এমইউ/এমএসএইচ/জেআইএম