তবুও বাড়ি যেতেই হবে!

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:২৫ পিএম, ১৯ মে ২০২০

রাজধানীর গুলিস্তানে ফ্লাইওভারের অদূরে একবার রাস্তার এধারে আরেকবার ওইধারে এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করছিল আনুমানিক ২০-২১ বছরের এক তরুণ। কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনে কয়েকবার দাঁড়িয়ে চিটাগাং রোডে যাওয়ার জন্য ভাড়া কত জিজ্ঞেস করছিলেন। ড্রাইভার বলেন, একদম রিজার্ভ গেলে ৪০০ টাকা আর একা গেলে জনপ্রতি ৮০ টাকা। ভাড়া শুনে কথা না বাড়িয়ে ফুটপাতে এসে দাঁড়ায় ওই যুবক।

Eid-Journey6

কৌতূহলবশত জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক তার নাম-পরিচয়, পেশা, বাড়ি কোথায়, কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে ওই যুবক জানান, তার নাম তুহিন, বাড়ি কুড়িগ্রাম। ফতুল্লায় একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। চাকরিতে সমস্যা না থাকলেও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে রওনা হয়েছেন।

Eid Journey

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কেন বাড়ি যাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তার সহজ উত্তর, বছরের দুটা ঈদেই বাড়ি যাই। যত কষ্টই হোক বাড়ি যামু।

মঙ্গলবার (১৯ মে) বিকেল আনুমানিক ৪টায় সরেজমিন গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে নিষেধ করলেও অসংখ্য মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য গুলিস্তানে সমবেত হয়েছেন। নারী-পুরুষ শিশু-বৃদ্ধ কেউ বাকি নেই। কেউ প্রাইভেটকার, কেউ মাইক্রোবাস, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশা আবার কেউবা ঘোড়ার গাড়িতে করে রাস্তা ভেঙে ভেঙে গ্রামে রওনা হচ্ছেন। গুলিস্তানে বিভিন্ন রাস্তায় গ্রামমুখী লোকজনকে এলোপাতাড়ি ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।

Eid Journey

গণপরিবহন না থাকায় বিকল্প হিসেবে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ঘোড়ার গাড়ির কদর বেড়েছে। চাহিদা থাকায় চালকরাও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া হাঁকছেন। ভাড়া বেশি হলেও গ্রামে ফেরা চাই। মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও যেসব পরিবহনে তারা যাচ্ছেন সেখানে শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। ঠেলাঠেলি করেই গাড়িতে উঠতে দেখা যায়। বিভিন্ন রফতানি পণ্যের প্রতিষ্ঠান লোগো সম্বলিত গাড়িতে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।

এসানুল হক নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি কয়েক ঘণ্টা আগে ২৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান আসলেও এখন ৪০০ টাকা ভাড়া চাইছে চালক। বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন গুলিস্তান থেকে তাদের আপাতত গন্তব্য চিটাগাং রোড। সেখান থেকে তারা বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন বলে আশা করে রওনা হয়েছেন।

Eid Journey

পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে এক ব্রিফিংয়ে রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষকে নিজ নিজ ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যার যার ঘরে থাকুন। গ্রামে গিয়ে পরিবার পরিজনের জন্য মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি করবেন না। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আপনার মৃত্যু হলে তা হবে সবার জন্য একটি সংখ্যা কিন্তু পরিবারের জন্য আপনি তাদের পৃথিবী।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আজ ১৯ মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭০ জনে।

Eid Journey

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা করোনাভাইরাস নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে প্রতিদিনই বলছেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। আপনি ঘরে থাকলে আপনি নিজে, আপনার পরিবার ও স্বজনরা সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সরকারি বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ঈদ উদযাপনের জন্য তবুও বাড়ি যেতে হবে। যতই না থাকুক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরণের ঝুঁকি।

এমইউ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।