করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত প্রবাসীদের পাশে আইওএম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ২০ মে ২০২০

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ২০২০ সালে কয়েক লাখ প্রবাসীকে ফেরত আনা, গ্রহণ এবং পুনরেকত্রীকরণে সরকারকে সহায়তাও করছে সংস্থাটি।

বুধবার (২০ মে) আইওএম বাংলাদেশের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, 'জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ শ্রমিক উন্নত জীবন ও জীবিকার আশায় দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে প্রবাসীদের মাধ্যমে। আইওএম এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আশঙ্কা করছে যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্সে অনুমেয় ২২ শতাংশ পতন বাংলাদেশের প্রবাসী ও রেমিট্যান্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।'

'আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বাস্তবায়নকারী সহযোগী সংস্থা বাংলাদশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি (ব্র্যাক) ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন দেশগুলো থেকে ফেরত আসা বিপদাপন্ন প্রবাসীদের সহায়তা প্রদানে কাজ করছে। সংস্থাটি একই সাথে বিপদগ্রস্ত প্রবাসী, বিশেষ করে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) দেশগুলো থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের সহায়তার জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। জিসিসি দেশগুলোতে তেলের দাম কমে যাওয়ার পর বৃহৎ আকারে সেক্টরব্যাপী শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।'

'ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) অর্থায়নে এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আইওএম বিদেশে আটকে থাকা অভিবাসী ও ইইউ দেশফেরত বিপদাপন্ন প্রবাসীদের সহায়তা প্রদান করছে। আইওএম-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীদের জন্য একটি হটলাইন (+৮৮০৯৬১০১০২০৩০) খোলা হয়েছে। হটলাইনে কলদাতাদের সহায়তা ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে।'

'www.probashihelpline.com-এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচারিত এই হটলাইনের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছেন প্রবাসীরা। গত মার্চ থেকে এই ওয়েবসাইট ও এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অ্যাপভিত্তিক কলের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১১ হাজার ৪৭০ প্রবাসীর কাছে পৌঁছানো গেছে।'

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, “অভিবাসীরা আমাদের জাতীয় উন্নয়নের প্রথম সারির সৈনিক। মহামারি দ্বারা আক্রান্ত অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। প্রবাসীদের সহায়তায় মন্ত্রণালয় অনেক উদ্যোগের সাথে জড়িত।'

তিনি বলেন, 'গত মার্চ থেকে ১০টি পুনরেকত্রীকরণ সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে ৮০৬ জন ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ ফেরত প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশের ৬৪টি জেলা এই সেবাকেন্দ্রগুলোর আওতাভুক্ত। এর মধ্যে বিপদাপন্ন প্রবাসীদের চিহ্নিত করে তাদের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করা হয় এবং চলাচলে বিধিনিষেধ, বেকারত্ব এবং ঋণের মতো এই মহামারি সৃষ্ট বিরূপ প্রভাব কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে সম্পর্কে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। এরপর প্রয়োজনীয়তা ও বিপদাপন্নতা মূল্যায়নের করে বিদেশফেরত এসব প্রবাসীর তাৎক্ষণিক নগদ সহায়তা, দীর্ঘমেয়াদি পুনরেকত্রীকরণ সহায়তা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সহায়তা প্রদান করা হবে। এই সহযোগিতা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের মতো অভিঘাতমূলক ঘটনায় সংকটাপন্ন প্রবাসীদের মাঝে সহনশীলতা তৈরি করবে।'

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে, বিশেষ করে প্রবাসীসহ সর্বোচ্চ বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর এই মহামারির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকারদের সহায়তা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তুত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে প্রত্যাশা প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের সহায়তায় কাজ করছি আমরা। যেন করোনাভাইরাস-পরবর্তী বাস্তবতায় সমাজে নিজেকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তাদের কাছে থাকে। সবচেয়ে বিপদাপন্নদের ওপর নজর রেখে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার অংশীদার দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহ এবং জীবিকা রক্ষায় সহায়তা প্রদান করছে।'

আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, বিভিন্ন দেশ বিধিনিষেধ শিথিল করলে এবং বিমানসংস্থাগুলো পুনরায় ফ্লাইট চালু করলে হাজার হাজার অভিবাসী বাংলাদেশে ফিরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মাঝে অনেক প্রবাসীর জন্যই এই স্বদেশফেরত সুখকর হবে না। কারণ, অনেকেই করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে জীবিকা হারিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব থেকে বৈশ্বিক শ্রমবাজার পুনরায় ঘুরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তাদের বিদেশে কাজে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় এই যে, এই প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদাপন্নদের তাদের খাবার, আশ্রয়, মনোসামাজিক এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রয়োজন হবে। একইসাথে তাদের সহনশীলতা তৈরিতে ও টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তাদের ঋণ মধ্যস্থতা সংক্রান্ত সহায়তা প্রয়োজন হবে। দরকার হবে জীবিকা নির্বাহের সহযোগিতা।'

দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসীদের কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোভিড-১৯ সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে প্রত্যাশা প্রজেক্টের ১০০ কর্মী এবং ১০০০ এরও বেশি কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করেছে ব্র্যাক। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, 'অভিবাসীদের সঠিক সময়ে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য প্রয়োজন, যাতে তারা এই সংকটকালে নিজেদের রক্ষা এবং পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হয়। অভিবাসী শ্রমিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দেশে ও বিদেশে তাদের সহযোগিতার বিষয়টি আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।'

বিপদাপন্ন প্রবাসীদের সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, আইওএম বাংলাদেশ সরকারকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ও স্থানী জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারকে সাহায্য করছে আইওএম।

এমইউএইচ/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।