করোনা : প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পতিত জমিতে হবে শাক-সবজি চাষ
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট মোকাবিলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পতিত জমিতে হবে শাক-সবজি চাষ।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সাইট অফিস, প্রত্নতত্ত্ব স্থল ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর সংলগ্ন পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।
‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারি ও পরবর্তী সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পতিত জমি ব্যবহার সংক্রান্ত’ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসের চলমান বিশ্বব্যাপী মহামারি পরবর্তী সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী দেশের সব পতিত জমির সদ্ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতাধীন পুরাকীর্তি, জাদুঘর ও অফিসের আনাচে-কানাচে সংলগ্ন পতিত জমি সদ্ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে এই প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।'
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সাইট অফিস, প্রত্নতত্ত্ব স্থল ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর সংলগ্ন পতিত জমি এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে জানিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, 'প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের ম্যান্ডেট বলবৎ রেখে অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে ক্রান্তিকালে অবদান রাখার জন্য এই আহ্বান (পতিত জমিতে চাষবাদ) জানানো হয়েছে।'
এতে বলা হয়, 'অধিদফতরের যে জমি বা পুকুরে ইতোমধ্যে চাষ হচ্ছে, সেখানে আগের নিয়ম বলবৎ থাকবে। এগুলো বর্তমানে প্রচারিত প্রচেষ্টার আওতায় আনা যাবে না।'
'জাতীয় স্বার্থের এই আহ্বান বাস্তবায়নে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পক্ষ থেকে আলাদা বরাদ্দ প্রাপ্তির চিন্তা করাও ঠিক হবে না। নিজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে সম্ভব হলে নিজস্ব তহবিল এবং প্রয়োজনে সময় অন্তরে ধার পরিশোধের শর্তে, সম্ভব হলে নিজেদের কাছ থেকে ধার নিয়ে সাইট অফিস, প্রত্নস্থল ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর সংলগ্ন পতিত জমিতে সবজি চাষের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।'
এ ক্ষেত্রে তেভাগা নীতি অনুসরণ করা যায় জানিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়,' উৎপাদিত শাকসবজির এক ভাগ চাষবাদের ব্যয়, একভাগ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং একভাগ স্থানীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ভোগ করবেন।'
'শাকসবজি চাষের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রয়োজনে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কিষাণ নিয়োজিত করা যেতে পারে। উৎপাদিত শাকসবজি চাষবাদের ব্যয় অংশ (তিন ভাগের এক ভাগ) দিয়ে কিষাণের মজুরি বা চাষবাদকালীন ব্যয় পরিশোধ করা যেতে পারে। এ কাজে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত অংশের স্বার্থে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর বিশেষ সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।'
কোনোক্রমেই অধিক ফলন বা ব্যবস্থাপনার সুবিধার দোহাই দিয়ে সরকারি জমিতে বর্গা বা আধি বা পত্তন বা লিজ বা অন্য প্রক্রিয়ায় কর্মচারী ছাড়া কাউকে নিয়োজিত করা যাবে না বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, 'প্রত্ন স্থাপনার অসামান্য সর্বজনীন মান ও নান্দনিকতাকে অক্ষুণ্ন রেখে পতিত জমিতে সবজি চাষ করা যেতে পারে, যাতে প্রত্নসম্পদের কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের বিদ্যমান আইন ও ইউনেস্কোর গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।'
'প্রত্নস্থল, সাইট অফিস বা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কার্যকারিতা বা দৃষ্টিনন্দনতা বা ভবিষ্যতে ক্ষতি হতে পারে এমন ধরনের শাক-সবজি চাষ করা যাবে না। সেজন্য সাইট বা বাগানের দৃষ্টিনন্দনতা ক্ষুণ্ন করে শাক-সবজি চাষবাদের স্থলে মাচা দেয়া বা অস্থায়ী কাঠামো অনুমোদন যোগ্য নয়। মাচা দেয়া বা অস্থায়ী কাঠামোবিহীন শুধু মাটিতে চাষ করতে হবে। মাটির নিচে ৬ ইঞ্চি বা এর বেশি গভীরতায় মূল প্রবেশ করে এমন সবজি (যেমন- গাজর, বিট, মিষ্টি আলু ) চাষ করা যাবে না।'
'পতিত জমিতে শুধু শাক-সবজি চাষবাদের উদ্যোগ নেয়া হলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সভায় রেজুলেশন নিয়ে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন (৩/৪/৭ সদস্য) করতে হবে। আঞ্চলিক পরিচালক অফিসের কাছের প্রত্নস্থল, সাইট অফিস বা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কার্যকরী কমিটিতে আঞ্চলিক পরিচালক সভাপতি থাকবেন এবং দূরবর্তী স্থানের কার্যকরী কমিটির তার অনুমোদনে গঠিত হবে।'
শাকসবজির চাষাবাদের সুবিধার জন্য নতুন করে টিলা সমান করা বা নিচু জায়গা ভরাট করা বা বৃক্ষনিধনের মতো এলাকায় পরিবর্তন আনা সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। এ বাবদ অর্থ চাওয়া বা ব্যয় করে পরে আয় হতে পরিশোধ করার বা কর্তনকৃত বৃক্ষ বা খননের মাটি বিক্রির মাধ্যমে আয়ের প্রচেষ্টা নেয়া যাবে না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরএমএম/জেডএ/পিআর