করোনায় মৃতদের দাফনে কাজ করছে কোয়ান্টাম
করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দাফনে সহায়তা করছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম। এমন দুর্যোগে স্বজনরা দূরে সরে গেলেও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২২ মে পর্যন্ত দুই শতাধিক মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করেছেন তারা। মৃতদের দাফনে সারা দেশে প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক সালেহ আহমেদ জানান, করোনায় নিহতদের মরদেহ ফেলে স্বজনদের পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে মৃতদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। করোনা পজিটিভ ও করোনা সন্দেহভাজনের মরদেহ সৎকারে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। গত ৭ এপ্রিল থেকে ওই স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ শুরু করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় গিয়ে মরদেহ গোসল করানো, কাফনের কাপড় পরানোসহ পুরো দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন স্বেচ্ছাবেককরা।
তিনি জানান, কোয়ান্টামের পক্ষ থেকে শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু ধর্মের মরদেহ সৎকারের জন্যেও আলাদা টিম কাজ করছে। মহিলা মরদেহের জন্যে কোয়ান্টামের মহিলা স্বেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ১৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে ২০ জন মরদেহের দাফন ও সৎকার করা হয়েছে। এ জন্য ঢাকার ভেতরে ১০২ জন কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক এবং ঢাকার বাইরে ১৮০ জন কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় গিয়ে মৃতদের ধোয়ানো, অজু করানো, কাফনের কাপড় পরানো সম্পন্ন করি আমরা। এর পর ডব্লিউএইচও-র নির্ধারিত বিশেষ ব্যাগে মরদেহ প্যাকেট করে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে। এরপর জানাজা পড়ানো হয় সাধারণ মরদেহের মতোই। কবরস্থ করার পর মৃতের জন্যে আমরা আন্তরিক দোয়া করি।
সালেহ আহমেদ জানান, কবরস্থানে মৃতের পরিবারের হাতেগোনা কয়েকজন থাকেন। কখনও কখনও কেউই থাকেন না। তবে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বজনদের কাছে না পেলে খুব কষ্ট লাগে। পরিবারের যে মানুষটা এতটা বছর একসঙ্গে ছিলেন, সেই মানুষটার শেষযাত্রায় স্বজনদের অনুপস্থিতি সত্যিই কষ্টদায়ক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দাফন কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়ার ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেক কভার ও মরদেহের কাফনের কাপড় সবকিছুই কোয়ান্টামের নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করা হয়। মরদেহ বহনের জন্য বিশেষ বডি ব্যাগসহ সুরক্ষার জন্যে তিন ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মরদেহ সৎকারের পর সুরক্ষার জন্য পিপিইসহ পরিধেয় অন্যান্য সামগ্রী কবরস্থানেই পুড়িয়ে ফেলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, পুরো প্রক্রিয়ায় আমরা যখন স্বজনদের ঠিক সেভাবে কাছে পাই না, তখন খুব কষ্ট লাগে। আমরা ধর্মীয় রীতি মেনে যতটা সম্ভব মমতার সঙ্গে কাজগুলো করার চেষ্টা করি। কিন্তু স্বজনহীন মানুষটি মৃত্যুর পরও যখন এতটা অসহায়, তখন মনে হয় আমরাই তার পরিবারের লোকজন। শেষবারের যাত্রায় আমরা তাকে সেভাবেই সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানাই।
এমইউএইচ/এফআর/জেআইএম