‘আমার তো মোবাইল-ইন্টারনেট নাই, ক্যামনে সিরিয়াল দিমু?’
মাথার ওপর কড়কড়ে রোদ। শাহবাগের বেতার ভবনের প্রধান ফটকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে একজন নিরাপত্তা প্রহরী ঘোষণা দিয়ে ওঠেন, ‘যারা অনলাইনে টোকেন সংগ্রহ করেছেন তারা কাগজ জমা দিয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সিরিয়াল ধরে লাইনে থাকেন। সময় হলে আপনাদের ভেতরে ডেকে নেয়া হবে।’
এ সময় ছোট্ট এক শিশুকে নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান একজন নারী। তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার মেয়েটার খুব জ্বর। আমার তো মোবাইল-ইন্টারনেট নাই। এগুলি কেমনে চালায় তাও জানি না। আমার কি পরীক্ষা হইবো না?’
নিরাপত্তারক্ষী তার কথা শুনে ওই নারীকে মূল ভবনে ‘বড় স্যারদের’ সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
ঈদুল ফিতরের আগের দিন রোববার (২৪ মে) দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা যায় বেতার ভবনে স্থাপিত ফিভার ক্লিনিক ও করোনাভাইরাস ল্যাবরেটরির সামনে।
সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালেও তখনো রাস্তায় করোনা পরীক্ষা করতে আসা জনাবিশেক রোগীর ভিড়। পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের মধ্যে ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধও রয়েছেন। রাস্তায় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন। এক তরুণকে এ সময় দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়তে দেখা যায়।
আলাপ করে জানা যায়, ভিড়ে রোগীদের কষ্ট লাঘবে ফিভার ক্লিনিক ও করোনা ল্যাবরেটরির জন্য অনলাইনে সিরিয়াল দেয়ার নিয়ম চালু হলেও বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র রোগীরা। তাদের অনেকে এখানে এসে ফিভার ক্লিনিকে সেবা পেলেও পরীক্ষা করাতে পারছেন না।
গত ২১ মার্চ শাহবাগের এ বেতার ভবনে ফিভার ক্লিনিক চালু হয়। প্রতিদিন এখানে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগী চিকিৎসা দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত ১ এপ্রিল একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত হয় করোনাভাইরাসের ল্যাবরেটরি। ল্যাবরেটরিতে এ পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অনলাইন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার সিরিয়াল দেয়ার নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে যারা দক্ষ, তাদের সুবিধা হলেও সমস্যা পড়েছেন নিরক্ষর ও দরিদ্র রোগীরা।
এমইউ/এইচএ/এমকেএইচ