অন্য রকম ঈদ

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ২৫ মে ২০২০

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এ দিন উপলক্ষে দেশের বিপণি বিতানগুলো থাকে জমজমাট। ধুম পড়ে যায় কেনাকাটার। এ কাজ সে কাজ নিয়ে মানুষের ছোটাছুটির শেষ থাকে না।

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ি ফেরার জন্য দৌড়াদৌড়ি থাকে। ঈদের আগে আগে তাই বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে ঠাঁই হয় না মানুষের। শহর ছেড়ে নাড়ির টানে গ্রামে ফেরে লাখ লাখ মানুষ। খোলা মাঠের ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করে কোলাকুলি করে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। কিন্ত এবারের ঈদ পালিত হচ্ছে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন পেক্ষাপটে।

ঈদ উপলক্ষে চারিদিকে আনন্দ-উৎসবে মুখর চিরচেনা সেই আনন্দ নেই এবার। ঈদে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেয়া দূরের কথা, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে কেউ যেন বাসায় প্রবেশ না করে সেদিকে লক্ষ্য সবার। বিশেষ প্রয়োজনে কোনো আত্মীয় দরজায় কড়া নাড়লেও প্রয়োজনটা মিটিয়ে বাইরে থেকে বিদায় দিতে পারলে ভালো হয় এমন অবস্থা এখন।

করোনাভাইরাসের কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবার ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এবার ঈদে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ নয়। কথা হবে ফোনে। দেখা হবে ভার্চুয়ালি। এভাবেই পালিত হবে ঈদ।

অনেকে সারা বছর চাকরি করে ক্লান্ত হয়ে যান। ঈদের এই ছুটিতে গ্রামগুলোতে বসে বন্ধুদের মিলনমেলা। দেশের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে থাকে উপচেপড়া ভিড়। অনেকে আনন্দ করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। অনেকেই চান ঈদের ছুটিতে সাগর-পাহাড় বা কাছাকাছি কোনো রিসোর্টে নিজেদের মতো সময় কাটাতে। বন্ধুদের বাড়িতে যাওয়া বা তাদের ডেকে হৈ-হুল্লোড় করা তো খুব স্বাভাবিক ঈদের সময়। তবে এখন এ সুযোগ নেই। এখন সময়টা করোনার, করোনায় আক্রান্তের শঙ্কায় রয়েছে বিশ্ববাসী।

প্রতিবার এমপি-মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক নেতারা এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলেও এবার একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে তারাও এবার গ্রামে যাচ্ছেন না। তাদের বেশিরভাগ ঢাকায় ঈদ করবেন। তবে এবার নেতারা ঢাকা থেকেই এলাকায় ত্রাণ পাঠিয়েছেন। কেউ কেউ কর্মীদের জন্য ঈদের উপহারও পাঠিয়ে দিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্ব ভয়ংকর সময় পার করছে। বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত দুই মাস ধরে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে দেশের মানুষ। ইতোমধ্যে দেশে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮০ জন। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬১০ জনে। এই পরিস্থিতিতে এবার ঈদ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ঘরে থেকে এবারের ঈদ উদযাপন করতে হবে।

দেশ করোনা সংক্রমণের কারণে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ মসজিদে পড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এবার ঈদের জামাত ঈদগাহে না করে মসজিদে করার অনুরোধ করে গত ১৪ মে নির্দেশনা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঈদের আগের দিন এক ভিডিও বার্তায় সেই নির্দেশনা স্মরণ করে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশ করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মতো বাংলাদেশও করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে অতিমাত্রায় সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য কোনো খোলা ময়দান বা ঈদগাহে নামাজ না পড়ার জন্য আমরা আলেম-ওলামাদের মতামত নিয়ে দেশবাসীকে আবেদন জানিয়েছি যে, ঈদের নামাজ যার যার নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য। কিছু শর্তসাপেক্ষে মুসল্লীদের আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, আশা করি সেভাবে ঈদের জামাত অনষ্ঠিত হবে।

এফএইচএস/এমএসএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।