পুলিশ হাসপাতালে আরও দুই রোগীকে প্লাজমা থেরাপি

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, আর জীবন দিয়েছেন ১৪ জন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে পুলিশ হাসপাতাল ও একটি ভাড়া করা হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসা চলছে।
সম্প্রতি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দুই ক্রিটিক্যাল রোগীকে প্লাজমা থেরাপির চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করাসহ সব পুলিশ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। এ কারণে একদিকে পুলিশ আক্রান্তের হার যেমন কমছে, তেমনি দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে সুস্থতার হার।
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা থেরাপিতে চিকিৎসা দেয়ার পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্লাজমা থেরাপির মেশিন বসানো হয়েছে। ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য প্লাজমা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডোনার হিসেবে সুস্থ হওয়া পুলিশ সদস্যদেরকেই পাচ্ছে পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই আক্রান্ত পুলিশ সদস্যকে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়। করোনা উপশম কমলেও অন্য একাধিক রোগের কারণে মারা যান দুই রোগী। তবে পুলিশ হাসপাতাল প্লাজমায় করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা যাচ্ছে। করোনার ক্রিটিক্যাল রোগীর বাইরেও প্লাজমা থেরাপি দেয়ার চিন্তা করছে পুলিশ হাসপাতাল।
বুধবার (২৭ মে) রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনোয়ার হাসানাত খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সম্প্রতি দুই রোগীকে প্লাজমা থেরাপির ব্যবস্থা করি। তাদের বেশ উন্নতি দেখেছি। তাদের ভেন্টিলেটর ছাড়াই অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়তে দেখা গেছে। যেটা করোনার রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেদনার কথা হলো- দুজনকে আমরা হারিয়েছি কারণ তারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই কার্ডিয়াক ও পেডিয়াট্রিকের মতো অন্যান্য কঠিন সব রোগে ভুগছিলেন। তবে আমরা এটা মোটামুটি অনুধাবন করেছি যে, শুধু করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্লাজমা কার্যকরী একটা চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে।
ডা. মনোয়ার হাসানাত খান বলেন, এতেদিন যাবৎ আক্রান্ত ৪ হাজারের অধিক সদস্যের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২৮০ জন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও এর তত্ত্বাবধানে ইমপালস হাসপাতালে মোট ১ হাজার ১১৯ করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল ও ভেন্টিলেশনে থাকা দুই রোগীকে নতুন করে প্লাজমা দেয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তুলনামূলক কম অসুস্থ করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদেরও খুব সহসায় আমরা প্লাজমা থেরাপিতে চিকিৎসা শুরু করবো।
উল্লেখ্য, মানুষের রক্তের জলীয় অংশকে বলা হয় প্লাজমা। রক্তে প্লাজমা থাকে ৫৫ ভাগ। করোনাজয়ীর অ্যান্টিবডি থাকে রক্তের প্লাজমায়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর যারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদের প্রত্যেকের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। করোনাজয়ী ব্যক্তির দেহে তৈরি অ্যান্টিবডি যদি করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে তা করোনায় সংক্রমিত অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা হয় বলে এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘প্লাজমা থেরাপি’।
জেইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ