অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি
বর্তমান করোনা সংকটকালে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একইসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতার ফলাফল জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করার জন্যও অনুরোধ জানায় কমিশন।
সোমবার (১৫ জুন) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত থিমেটিক কমিটির অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়। কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমের সভাপতিত্ব সভায় করোনাকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত কল্পে তাদের জন্য পর্যাপ্ত গ্লাভস, মাস্ক, গামবুট সরবরাহ করা এবং এর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তদারকি জোরদার করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সংক্রমিত হলে গোটা শহরের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে বলেও মনে করে কমিশন।
কমিটির সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম সভার শুরুতে কোভিড-১৯ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় বলে উল্লেখ করে এই মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
সভায় বর্তমানে করোনার চরম সংকটকাল চলছে বিধায় জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে কমিটি গুরুত্বারোপ করে সরকারের নিকট নিম্নলিখিত সুপারিশসহ পত্র প্রেরণের প্রস্তাব করে।
পার্বত্য অঞ্চলের জুমচাষি, দলিত, হরিজন, গারো নারী বিশেষ করে যারা বিউটি পার্লারের কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন, হিজড়া, উর্দুভাষী, জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকের নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নেই বলে উল্লেখ করেন কমিটির সদস্যরা।
যাদের নামে কোনো কার্ড নেই- এমন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকার নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যরা তাদের তালিকা তৈরি করে কমিশনে দাখিল করবেন এবং কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে।
যারা প্রান্তিক মানুষের তালিকা প্রণয়নে অসততা বা গাফিলতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ করা।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন; দলিত, হরিজন, হিজড়া, উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী যাদের একটি কক্ষে ১০/১২ জনের বসবাস এবং অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি থাকায় তাদের আবাসের আশপাশে সুবিধাজনক স্থানে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার জন্য বিশেষ বুথের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, অবৈতনিক সদস্য চিংকিউ রোয়াজা, জেসমিন আরা বেগম, মিজানুর রহমান খান, ড. নমিতা হালদার, রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভের (আরডিসি) নির্বাহী প্রধান প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, কাউন্সিল অব মাইনোরিটিসের নির্বাহী প্রধান খালিদ হোসেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ইউএনডিপি প্রতিনিধি শঙ্কর পাল।
জেইউ/বিএ/জেআইএম